কুরবানীর ইতিহাস কি?
ইসলামে কুরবানীর ইতিহাস বেশ প্রাচীন এবং এটি ধর্মীয় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আল কুরআনে হাবিল এবং কাবিলের কাহিনী উল্লেখ রয়েছে, যেখানে প্রথম কুরবানীর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। ইবনে কাসির বর্ণনা করেছেন যে, হাবিল একটি ভেড়া এবং তার ভাই কাবিল তার ফসলের কিছু অংশ স্রষ্টার উদ্দেশ্যে নিবেদন করে।
কুরবানীর প্রাচীন ইতিহাস:
1.হাবিল এবং কাবিল:
- হাবিল: হাবিল ছিলেন আদম (আঃ) এবং হাওয়ার (আঃ) পুত্র, যিনি আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি পশু কুরবানী করেছিলেন। এটি ছিল একটি ভেড়া।
- কাবিল: কাবিল তার ফসলের কিছু অংশ স্রষ্টার উদ্দেশ্যে নিবেদন করেছিলেন।
- উল্লেখ: আল কুরআনে এই ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে যে, হাবিলের কুরবানী গ্রহণযোগ্য হয়েছিল কিন্তু কাবিলের কুরবানী গ্রহণযোগ্য হয়নি। এটি ঈর্ষা এবং শত্রুতার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত কাবিল তার ভাই হাবিলকে হত্যা করে।
আল কুরআনের উল্লেখ:
আল কুরআনে, সূরা আল-মায়েদাহ (৫:২৭) এ হাবিল এবং কাবিলের কুরবানীর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে:
"আর তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের প্রকৃত ঘটনা শুনিয়ে দিন। যখন তারা উভয়ে একটি কুরবানী পেশ করেছিল। তাদের একজনের পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করা হয়েছিল এবং অপরজনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়নি।"
ইবনে কাসিরের বর্ণনা:
ইবনে কাসির তার বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন যে, হাবিল একটি ভেড়া কুরবানী করেছিলেন যা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। অন্যদিকে, কাবিল তার ফসলের কিছু অংশ নিবেদন করেছিলেন যা গ্রহণযোগ্য হয়নি।
কুরবানীর তাৎপর্য:
কুরবানী মূলত আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং তার সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগের প্রতীক। হাবিল এবং কাবিলের কাহিনী থেকে আমরা শিখতে পারি যে, আল্লাহর কাছে নিবেদনের জন্য অন্তরের বিশুদ্ধতা এবং সত্যিকারের ইচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইবরাহীম (আঃ) এর কুরবানী:
ইসলামে কুরবানীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল ইবরাহীম (আঃ) এর কুরবানী। তিনি আল্লাহর আদেশে তার প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে কুরবানী করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। আল্লাহ তা'আলা ইবরাহীম (আঃ) এর এই আত্মত্যাগের পরীক্ষা গ্রহণ করেন এবং তাকে একটি দুম্বা কুরবানী করার আদেশ দেন। এই ঘটনার স্মরণে মুসলিমরা ঈদুল আযহা পালন করে এবং কুরবানী করে।
উপসংহার:
ইসলামে কুরবানীর ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ এবং এটি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, বিশ্বাস এবং আত্মত্যাগের প্রতীক। হাবিল এবং কাবিলের কাহিনী থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা কিছু নিবেদন করা হয়, তা আন্তরিকতা এবং বিশুদ্ধতার সাথে হওয়া উচিত।
কোরবানি কাদের উপর ফরজ
এই প্রয়োজনীয় নেসাব পরিমাণ বিষয়টি সাহিহ হাদিসের অনুযায়ী প্রমাণিত হয়েছে। নিম্নলিখিত হাদিসে এটি উল্লেখ করা হয়েছে:
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী মুহাম্মদ (সা:) বলেন, "যে মুসলিম প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের হবে, যে ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে, তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব।" (সহীহ মুসলিম ১৩৯৭)
এই হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে, কুরবানী ওয়াজিব হবে যে মুসলিম প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের হবে, এবং যে সময়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে।
কুরবানী সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
সত্যিকারের, ইসলামে কুরবানী অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় আদর্শ। কুরবানী মুসলিম সমাজের মধ্যে আল্লাহর ইচ্ছার অনুসারে প্রতিবছর সাধারণত ঈদ উল আযহা নামে পরিচিত ঈদের দিনে অনুষ্ঠান করা হয়।
কুরবানীর মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহর পূর্ণ অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি অর্জন করা। এটি ইব্রাহীম (আঃ) এর আদায়ের মতো, যা ইসলামে প্রতিষ্ঠাতন করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে মুসলিম সমাজ তার নিজেদের ভাগ্য ও অন্যকে সহানুভূতিতে অংশীদার করে অন্যকে সাহায্য করার দায়িত্ব নিয়ে এসেছে।
কুরবানীর প্রক্রিয়া অনেকটাই গভীর ধারনা এবং শ্রদ্ধার সাথে সম্পর্কিত। এটির মাধ্যমে মুসলিম সমাজ আল্লাহর নিকট তার শ্রদ্ধা এবং অনুগ্রহ প্রকাশ করে।
Comments
Post a Comment