রাজশাহী "ফলের রাজা" হিসেবে পরিচিত, এবং তার বিখ্যাত আম, হিমসাগর (যা অনেকেই খিরসাপাত নামে জানেন), এই খ্যাতির এক বড় কারণ।
রাজশাহীর হিমসাগর আম কেন বিখ্যাত, তা নিয়ে আলোচনা করতে পারা অত্যন্ত আনন্দের। এই আমের জনপ্রিয়তার কিছু মূল কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
রাজশাহীর বিখ্যাত আমের নাম কি
রাজশাহীর আম: বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ
রাজশাহী বাংলাদেশের একটি প্রধান শহর, যা প্রাচীনকালে বাংলার শাসকদের একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল। এই শহরটি খাবার, সংস্কৃতি, ও ঐতিহ্যের সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। এর মধ্যে অন্যতম একটি অমূল্য সম্পদ হলো রাজশাহীর আম।
রাজশাহীর আমের খ্যাতি
রাজশাহীর আম বিখ্যাত এবং মজার স্বাদের জন্য সুপরিচিত। এটি বাংলাদেশের প্রধান আম উৎপাদক এলাকার মধ্যে প্রধান একটি। রাজশাহীর আমের বীজ বাগানের সম্পদ ও জলের সৃষ্টির জন্যও বিখ্যাত। এটি মূলত মহানন্দা, পদ্মা, ও জমুনা নদীর উপকূলে অবস্থিত।
উৎপাদন ও বিতরণ
রাজশাহীর আম বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান ফসল। রাজশাহী এলাকায় প্রচুর পরিমাণে আম উৎপাদন হয় এবং তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পরিবহন করা হয়। রাজশাহীর আম সাধারণত তাজা, সুগন্ধি এবং মিষ্টি স্বাদের হয় এবং এটি আম মিষ্টি, আম চাটনি, আম পিঠা ইত্যাদি তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
আমের বিভিন্ন প্রজাতি
রাজশাহীর আমের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির আম যা এর স্বাদের বৈচিত্র্য ও জনপ্রিয়তার কারণ:
- ল্যাংড়া: রাজশাহীর অন্যতম বিখ্যাত আম।
- হিমসাগর (ক্ষীরসাপাতি): স্বাদ ও সুগন্ধির জন্য বিখ্যাত।
- আম্রপালি: রসালো এবং মিষ্টি স্বাদের জন্য পরিচিত।
- ফজলি: আকারে বড় এবং সুগন্ধি।
- গোপালভোগ: মৌসুমের প্রথম দিকে পাওয়া যায়।
- লক্ষণভোগ: মিষ্টি স্বাদের।
- হাঁড়িভাঙা: মাংসালো এবং দীর্ঘস্থায়ী।
রাজশাহীর আমের বিশেষত্ব
রাজশাহীর আমের বিশেষত্ব হলো এর সমৃদ্ধ স্বাদ ও বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতির উপকারিতা। এটি দেশের অত্যন্ত উজ্জ্বল মুখ্যত্ব রাখে এবং একটি মুখ্য সম্পদ হিসাবে পরিচিত।
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
রাজশাহীর আম শুধু খাদ্য নয়, এটি দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথেও গভীরভাবে জড়িত। প্রতিটি আম মৌসুমে দেশের মানুষ আম উৎসব পালন করে থাকে এবং বিভিন্ন আমের মেলায় অংশগ্রহণ করে।
রাজশাহীর আমের স্বাদ ও সৌন্দর্য বাংলাদেশের প্রতিটি কোণে অনুভব করা যায়। এটি শুধু একটি ফল নয়, বরং দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বাংলাদেশের সবচেয়ে ১০ জাতের ভালো আম কি?
গ্রীষ্মকাল দেশি ফলের ভরা মৌসুম। ইতোমধ্যেই বাজারে এসে গেছে নানা ধরনের দেশীয় ফল। আর যেসব ফল এই মুহূর্তে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে তার মধ্যে আম অন্যতম।
আমকে বলা হয় ফলের রাজা। অনন্য স্বাদের পাশাপাশি পুষ্টিগুণেও আম বেশ সমৃদ্ধ ফল। তবে আমের রয়েছে আবার অসংখ্য জাত। আর জাতভেদে আমের স্বাদও ভিন্ন ভিন্ন হয়।
তাই আম কিনতে গেলেই বেশিরভাগ মানুষ দ্বিধায় থাকেন এই ভেবে যে, কোন জাতের আম স্বাদে সেরা? পাশাপাশি এই সন্দেহ থাকে যে, আমগুলো রাসায়নিক দিয়ে পাকানো নয়তো?
আপাতদৃষ্টিতে কোন জাতের আম স্বাদে সেরা সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। কারণ, একেকজনের স্বাদের অনুভূতি একেক রকম। যেটির স্বাদ আপনার কাছে সবচেয়ে সেরা, সেটি হয়তো অন্য কারো পছন্দের স্বাদের তালিকায় দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানেও থাকতে পারে।
তবে স্বাদের ক্ষেত্রে সেরা নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও কোনটি কোন জাতের আম এবং সেটি পরিপক্ব কি-না তা কিছু বিষয় দেখে সহজেই চেনা যায়।
সুস্বাদু ১০ জাতের আম চেনার উপায়
গোপালভোগ
সাধারণত মৌসুমে সবার আগে আসে গোপালভোগ জাতের আম। গোপালভোগ আম মাঝারি আকারের, এই আমের নিচের দিকে একটু সরু। এই জাতের পরিপক্ব আমের গায়ে সাধারণত হালকা হলুদ ছোপ ছোপ থাকে। পাকা আমের রং হলুদাভ সবুজ। এই আমের আঁটি পাতলা, আঁশ নেই ও মিষ্টি। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে গোপালভোগ আম পাকা শুরু হয়।
হিমসাগর
গোপালভোগের পর বাজারে ওঠে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি জাতের আম। এ আমের গড়ন বুকের দিকটা গোলাকার এবং অবতল থেকে সামান্য লম্বাটে আকার নিয়ে শীর্ষদেশ গোলাকৃতির হয়ে থাকে। এ জাতের আমও পাকলে হলুদাভ সবুজ হয়, কখনো কখনো ময়লা হলুদ হয়। মাঝারি আকারের এই আমের কমলা শাঁস খুব মিষ্টি ও সুঘ্রাণযুক্ত। হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি আম বাজারে পাওয়া যায় মে মাসের শেষে অথবা জুনের প্রথম দিকে।
হিমসাগর (অন্য বর্ণনা)
উৎকৃষ্ট স্বাদের সুগন্ধযুক্ত জাতের আমের মধ্যে হিমসাগরের অবস্থান প্রায় শীর্ষে। হিমসাগর আম জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাকতে শুরু করে এবং পুরো জুন মাস বাজারে পাওয়া যায়। এ আমের ঠোঁট নেই, গড়ন বুকের দিকটা গোলাকার এবং অবতল থেকে সামান্য লম্বাটে আকার নিয়ে শীর্ষদেশ গোলাকৃতির হয়ে থাকে। পরিপক্ক হিমসাগর আমের রং হালকা সবুজ। পাকার পরেও সবুজ থেকে যায়। ত্বক মসৃণ, খোসা পাতলা।
ল্যাংড়া
এরপর বাজারে ওঠে ল্যাংড়া আম। ল্যাংড়া আম অনেকটা গোলকার ও মসৃণ। এর নাক নিচের দিকে থাকে। হালকা সবুজ রঙের খোসা, পাকলেও হলুদ হয় না। এর খোসা পাতলা, হলুদ শাঁস, ভালোভাবে না পাকলে আম খেলে মুখ চুলকাতে পারে। সুঘ্রাণের ল্যাংড়া আমের সুখ্যাতি রয়েছে। সাধারণত ৬ জুন থেকে পাকতে শুরু করে ল্যাংড়া আম।
লক্ষণভোগ
ল্যাংড়া আমের পাশাপাশি একই সময়ে লক্ষণভোগ বা লখনা আমও পাওয়া যায়। লক্ষণভোগ চেনার সহজ উপায় হলো, এর নাক মাঝামাঝি স্থানে। পাকলে এ জাতের আম উজ্জ্বল হলুদ হয় এবং বোঁটার কাছে লালাভ রং ধরে। এই আমের ঘ্রাণ বেশ ভালো, তবে মিষ্টি কিছুটা কম।
হাঁড়িভাঙা
এরপর বাজারে ওঠে হাঁড়িভাঙা আম। এ আমের উপরিভাগ তুলনামূলক বেশি মোটা ও চওড়া এবং নিচের অংশ অপেক্ষকৃত চিকন। এ আম মাংসালো, শ্বাস গোলাকার ও একটু লম্বা। অনেক ক্ষেত্রে চামড়া কুঁচকে গেলেও এই আম পঁচে না। সাধারণত ১০ জুন থেকে পাকতে শুরু করে হাঁড়িভাঙা।
আম্রপালি
আম্রপালি আমের খোসা মসৃণ বা তেলতেলে। আম্রপালি নিচের দিকে খানিকটা সুঁচালো এবং উপরে একটু গোলাকৃতির হয়। ছোট থেকে মাঝারি আকারের পাকা আম হলুদাভ সবুজ। শাঁস কমলা ও অনেক মিষ্টি। পাকা আম্রপালি আম বেশ কয়েক দিন ঘরে রাখা যায়। ২০ জুনের পর থেকে ভালোভাবে পাকা আম্রপালি আম পাওয়া যায়।
আশ্বিনা ও ফজলি
আশ্বিনা আর ফজলি আম দেখতে একই রকম। আকৃতিও বেশ বড়। তবে আশ্বিনা আম একটু বেশি সবুজ ও ফজলি আম খানিকটা হলুদ হয়। আশ্বিনার পেট মোটা হয় এবং ফজলি দেখতে লম্বা ধরনের হয়। আশ্বিনা কালচে সবুজ রঙের আর ফজলি আম সবুজ রঙের। আশ্বিনা আমের স্বাদ টক-মিষ্টি। অন্যদিকে, ফজলি টকগন্ধযুক্ত মিষ্টি স্বাদের।
কাটিমন
পুষ্টিগুণ এবং স্বাদের কারণে বিশ্বজুড়ে আম বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও বারোমাসি আমের বাণিজ্যিক চাষের দিকে ঝুঁকছেন দেশের চাষিরা। মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই আম পাওয়া যায়। পাকা কাটিমন হলুদ সুঘ্রাণযুক্ত মিষ্টি। কাটিমন আম দেখতে সাধারণত লম্বাটে আকারের।
রাজশাহী কিসের জন্য বিখ্যাত?
আমরা সবাই জানি, রাজশাহী বিখ্যাত আমের জন্য। সেই রাজশাহীর সেরা আম এখন আপনার ঘরে আসতে চলেছে। "আমার বাগানের সেরা আম, খেলে জুরাবে আপনার প্রাণ।"
ফলের রাজা আম, আর আমের রাজা রাজশাহীর আম। আমাদের রাজশাহীতে হরেক রকমের আমের চাষ হয়, যেমনঃ আম্রপালি আম, ল্যাংড়া আম, হিমসাগর আম, গোপালভোগ আম, ফজলি আম, লক্ষণভোগ আম এবং আরো অনেক।
হিমসাগর আম
হিমসাগর বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত আম। বাংলাদেশের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরা জেলায় এই আমের চাষ বেশি হয়। এই আমের মিষ্টি সুগন্ধ ও স্বাদ পৃথিবীর অন্যান্য আমের থেকে আলাদা। তাই সারা পৃথিবীতে স্বাদ ও গন্ধের জন্য এই আম বাণিজ্যিকভাবে খুব বেশি পরিমাণে চাষ করা হয়। হিমসাগর আম এতোই জনপ্রিয় যে, এই আমকে আমের রাজাও বলা হয়। এই আমের ভিতরের রং হলুদ ও কমলা, এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার এই আমে কোন আঁশ নেই।
হিমসাগর আম জুন মাসে গাছে পাকতে শুরু করে। এই আম চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, ভারতের নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং হুগলীতে চাষ করা হয়। কিন্তু রাজশাহীর হিমসাগর সব থেকে সুস্বাদু।
একটি স্বাভাবিক আমের ওজন ২৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম হয়ে থাকে যার ৭৭ শতাংশই হল আম, বাকি ২৩ শতাংশ আমের আটি। এই উৎকর্ষতাই এই আমের বৈশিষ্ট্য।
গোপালভোগ আম
বাংলাদেশে আমের মৌসুমের শুরুতে যে আমটির সুঘ্রান আম্রকাননের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে, অর্থাৎ যে আমটি সবার আগে পাঁকে সেটি হলো গোপালভোগ আম। গোপালভোগ নামটি এসেছে হিন্দু ধর্ম থেকে, গোপালভোগ অর্থ গোপালের ভোগ। মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ঈশ্বরের খাবারের প্রিয় ফলের সাথে তুলনা করে এই নামকরণ করেন। রাজশাহীর অতি সুমিষ্ট স্বাদে অনন্য নিদর্শন এই আম। বাংলাদেশে উৎকৃষ্ট জাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ অন্যতম। গোপালভোগ আম দেশের প্রায় সব জেলাতে দেখা যায়, কিন্তু উৎকৃষ্ট শ্রেণির গোপালভোগ আম জন্মে থাকে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরে।
গোপালভোগ আমের ধরণ মাঝারি আকৃতির লম্বা এবং অনেকটাই গোলাকার। ফলের বুক মাঝারি, কাঁধ উঁচু। ফলটি গড়ে লম্বায় ৮.৬ সেমি, ফলের ওজন ২০৮.০ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। ২ থেকে ৪টি আমে ১ কেজি হয়।
ল্যাংড়া আম
ল্যাংড়া আম হল আমের একটি বিখ্যাত জাত যা ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে চাষ করা হয়। এ আমের আরেকটি নাম বারানসী আম। এটি বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, ও নাটোর এলাকায় চাষ করা হয়। এই আম পাকার পর খানিকটা হলদে রঙের হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে যে কটি উৎকৃষ্ট জাতের আম আছে, তার মধ্যে ল্যাংড়া অন্যতম। পাকা অবস্থায় হালকা সবুজ থেকে হালকা হলুদ রঙ ধারণ করে। তবে এই ফলের শাঁস হলুদাভ। অত্যন্ত রসাল এই ফলটির মিষ্টতার পরিমাণ খুব বেশি। বোঁটা চিকন এবং আটি অত্যন্ত পাতলা। পোক্ত হবার পর পাকলে খাওয়ার উপযোগী অংশ ৭৩.১%, ওজন ৩১৪.১ গ্রাম।
আম্রপালি আম
আম্রপালি আম রাজশাহীর সুস্বাদু আমের একটি উন্নত জাত। ১৯৭১ সালে এই হাইব্রিড আমের জাতটি ভারতীয় কৃষিবিদ উদ্ভাবন করেন। ভারতীয় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ড. পিযুষ কান্তি মজুমদার ‘দশেরী’ এবং ‘নিলম’ দুটি জাতের আমের সংকরায়নের মাধ্যমে নতুন এ জাতটি উদ্ভাবন করেন, যার নাম দেয়া হয় আম্রপালি।
ভারতীয় জাতের এই আমটি বাংলাদেশে আসে ১৯৮৪ সালের দিকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ এনামুল হক এবং চুয়াডাঙ্গার আজাদ হাইব্রিড নার্সারির কর্ণধার আবুল কালাম আজাদের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে এই জাতটি আমদানি করা হয়। বর্তমানে এই আমের ব্যাপক চাষ করা হচ্ছে। প্রতি কেজিতে ৫-৭টি আম হয়।
ফজলি আম
ফজলি আম বা ফকিরভোগ আম হলো আমের একটি প্রকারভেদ বা জাত। এই ফল দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বদিকে বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে বেশি পাওয়া যায়। আমের অন্যান্য প্রজাতির থেকে দেরিতে ফলে আমের এই জাতটি। আকারে বেশ বড় আমের এই জাতের ওজন এক কেজি বা তারও বেশি হতে পারে। বাংলাদেশের উত্তরদিকের বিশেষ করে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদা জেলা ফজলি চাষের জন্য বিখ্যাত।
রাজশাহীর আম এত সুস্বাদু কেন
রাজশাহীর আম বিশ্বব্যাপী খ্যাতিমান। এ অঞ্চলের আমের অনন্য স্বাদ ও গন্ধ এক কথায় অতুলনীয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমের আবাদ হলেও এখানকার আমে এত স্বাদ কেন, তা নিয়ে কিছু বিশেষ কারণ রয়েছে।
রাজশাহীর আমের স্বাদের কারণ
- মাটি ও জলবায়ু: রাজশাহীর মাটি ও আবহাওয়া আমের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এখানকার মাটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও উর্বরতা আমের স্বাদে বিশেষ প্রভাব ফেলে। এছাড়া এখানকার তাপমাত্রা ও আবহাওয়া আমের মুকুল গঠনের সময় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- জেনেটিক বৈশিষ্ট্য: রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যও বিশেষ। এ অঞ্চলের কিছু স্থানীয় জাতের আম যেমন: ক্ষীরভোগ, মোহনভোগ, রাজভোগ, রানিপসন্দ ইত্যাদি, স্বাদে অনন্য।
- সূর্যের আলো: রাজশাহীর আবহাওয়ায় সূর্যের আলো সরাসরি আমের উপর পড়ে, যা সুক্রোজ নামক এক প্রকার মিষ্টি উপাদান তৈরিতে সহায়ক। এই উপাদান আমকে অত্যন্ত সুমিষ্ট করে তোলে।
- বৃষ্টিপাতের প্রভাব: আম পাঁকার সময় যদি কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হয় বা আকাশ মেঘলা থাকে, তাহলে আমে মিষ্টতার পরিবর্তে টক ভাব থেকে যায়। রাজশাহীর আবহাওয়ায় এই সমস্যা তুলনামূলক কম দেখা যায়।
রাজশাহীর উল্লেখযোগ্য আমের জাতসমূহ
- হিমসাগর: এই আমের শাঁস হলুদ ও কমলা রঙের হয় এবং এতে কোনো আঁশ নেই।
- গোপালভোগ: মৌসুমের শুরুতে পাওয়া যায় এবং এর স্বাদ খুব মিষ্টি।
- ল্যাংড়া: অত্যন্ত রসাল ও মিষ্টি এই আমের খোসা পাতলা এবং শাঁস হলুদাভ।
- আম্রপালি: ছোট থেকে মাঝারি আকারের পাকা আম হলুদাভ সবুজ এবং শাঁস কমলা ও মিষ্টি।
- ফজলি: দেরিতে ফলন হয় এবং আকারে বড়।
উন্নয়ন ও বাণিজ্যিকীকরণ
দেশ স্বাধীনের আগে থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের চাষাবাদ হয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি বৈজ্ঞানিক উপায়ে ও বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে আম চাষের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এর ফলে উচ্চ ফলনশীল ও ভালো জাতের আম উৎপাদন বাড়ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সরকার আমকে অর্থনৈতিক ফল হিসেবে গড়ে তুলতে এবং রপ্তানি বাড়াতে ব্যাপক পরিকল্পনা করছে। বৈজ্ঞানিক উপায়ে নিরাপদ আম উৎপাদন ও সারা বছর আম পাওয়ার জন্য গবেষণা চলছে। এছাড়া জিআই স্বীকৃতির মাধ্যমে বিদেশে আম রপ্তানির সুযোগও কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
রাজশাহীর আম শুধুমাত্র স্থানীয় বাজারেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও উচ্চ প্রশংসা পেয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা ও বৈজ্ঞানিক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করে এই খ্যাতি আরও বাড়ানো সম্ভব।
রাজশাহীর কোন আম কবে পাওয়া যাবে
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যা 'ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার' নামে পরিচিত। এই ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট তারিখ অনুযায়ী বিভিন্ন জাতের আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল পরিপক্ব ও বিষমুক্ত আম নিশ্চিত করা। নিচে রাজশাহীর 'ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার' অনুযায়ী আম পাড়ার সময়সূচী দেওয়া হলো:
আমের জাত | যে দিন থেকে নামবে |
---|---|
গুটি আম | ১৫ মে |
গোপালভোগ বা রানীপসন্দ | ২৫ মে |
লক্ষণভোগ বা লখনা | ৩০ মে |
হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাতি | ৩০ মে |
ল্যাংড়া | ১০ জুন |
ব্যানানা | ১০ জুন |
আম্রপালি | ১৫ জুন |
ফজলি | ১৫ জুন |
বারি-৪ | ৫ জুলাই |
আশ্বিনা | ১০ জুলাই |
গৌড়বতী | ১৫ জুলাই |
ইলামতি | ২০আগস্ট |
কাটিমন ও বারি–১১ | সারা বছর |
এই সময়সূচী চূড়ান্ত নয়। কোনো কৃষকের গাছে যদি নির্ধারিত তারিখের আগে আম পেকে যায়, তাহলে তিনি স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তাদের জানিয়ে আম পাড়তে পারবেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত
- বাজারে পরিপক্ব ও নিরাপদ আম নিশ্চিতকরণ: আম চাষিরা রাসায়নিক মুক্ত ও নিরাপদ আম উৎপাদনের জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
- পরিবহন ব্যবস্থা: কুরিয়ারে পরিবহন খরচ কমানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন
রাজশাহী অঞ্চলের আম পরিবহনের জন্য আবারও ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চালু হচ্ছে। ট্রেনটি এবার পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করবে। ট্রেনটি প্রতিদিন বিকেল চারটায় রহনপুর স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এবং মোট ১৫টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে।
- পরিবহন খরচ: ১ কেজি আম পরিবহনে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে সর্বনিম্ন ৯৪ পয়সা খরচ হবে।
আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা জানিয়েছেন যে, এ বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে এ বছর মোট ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন হবে।
এই উদ্যোগগুলো রাজশাহীর আম চাষিদের জন্য উপকারী হবে এবং দেশের বাজারে নিরাপদ ও পরিপক্ব আম সরবরাহ নিশ্চিত করবে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি আপনি রাজশাহীর আম সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। এছাড়াও রাজশাহীর কোন আম কবে পাওয়া যাবে সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য লাভ করেছেন।
আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এটি শেয়ার করলে আপনার বন্ধুরাও এ সম্পর্কে জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে। তাই দেরি না করে এখনই আপনার বন্ধুদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করুন।
এই রকম আরো তথ্যবহুল আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনার যদি কোনো মতামত থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানান। আমরা আপনার মতামতকে মূল্যায়ন করব এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নত আর্টিকেল তৈরি করার চেষ্টা করব।
ধন্যবাদ এবং আসসালামু আলাইকুম।
Comments
Post a Comment