জুমাতুল বিদা নিয়ে যত ভুল ধারণা সব গুলো আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। প্রতিটি মুসলিমের জন্য জুমাতুল বিদা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। সাধারণত এই দিনটি কি এবং কেন পালন হয়? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আমরা জানি যে ইসলাম ধর্মে রমজান মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাসের শেষ জুম্মার দিনকে জুমাতুল বিদা বলা হয়ে থাকে। জুমাতুল বিদা নিয়ে যত ভুল ধারণা রয়েছে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন।
জুমাতুল বিদা নিয়ে যত ভুল ধারণা
জুমাতুল বিদা নিয়ে যত ভুল ধারণা রয়েছে। জুমাতুল বিদা নিয়ে অনেক মুসলিমের মাঝে যে ভুল ধারণা রয়েছে তা স্পষ্ট করা জরুরি। কোরআন এবং সহিহ হাদিসের আলোকে দেখা যায় যে, জুমাতুল বিদা নামে কোনো বিশেষ ফজিলতপূর্ণ দিন ইসলামিক শরিয়তে নির্ধারিত নেই। এটি শুধুমাত্র রমজানের শেষ জুমা দিন হওয়ায় অনেক মানুষ এ দিনকে বিশেষভাবে উদযাপন করে থাকে, যদিও এর পক্ষে সহিহ হাদিসে কোনো উল্লেখ নেই।
ইসলামের মূল শিক্ষা হলো, কোনো ইবাদতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সঠিক দলিল থাকা প্রয়োজন। ইমাম শাওকানি রহ. এবং অন্যান্য মুহাদ্দিসদের মতে, জুমাতুল বিদা সম্পর্কে প্রচলিত বিশেষ নামাজ বা ফজিলত সংক্রান্ত কোনো সহিহ হাদিস পাওয়া যায় না। বিশেষত, রমজানের শেষ জুমায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে সারা বছরের নামাজের কাজা হয়ে যাবে—এই ধরনের বর্ণনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং জাল হাদিসের অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়াও, মুসলিমদের উচিত সব ধরনের ইবাদত কেবলমাত্র কোরআন ও হাদিসের সঠিক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে করা। বিদআত (ধর্মে নতুন কিছু যুক্ত করা) থেকে বিরত থাকা প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব। সুতরাং, জুমাতুল বিদার মতো দিনকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া কিংবা বিশেষ কোনো ইবাদত পালন করা ইসলামের মূল শিক্ষার বাইরে গিয়ে করা হয় এবং এটি থেকে বাঁচা উচিত।
অতএব, একজন প্রকৃত মুসলিমের উচিত শুধুমাত্র কোরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইবাদত করা এবং ভুল ধারণা ও বিদআত থেকে দূরে থাকা।
জুমাতুল বিদা কি
জুমাতুল বিদা কি? একজন মুসলিমের প্রথমে এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হবে। জুমাতুল বিদা শব্দটি মূলত রমজান মাসের শেষ জুমার দিনকে বোঝায়। এটি কোনো বিশেষ ইসলামিক বিধান নয়, বরং প্রথাগতভাবে মুসলিম সমাজে এই দিনকে একটি বিদায়ী জুমা হিসেবে দেখা হয়, যেহেতু এটি রমজানের শেষ শুক্রবার এবং অনেকের কাছে তা মানসিক ও ধর্মীয়ভাবে বিশেষ অর্থ বহন করে।
তবে, ইসলামিক শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায় যে, কোরআন ও হাদিসে সরাসরি জুমাতুল বিদা সম্পর্কে কোনো বিশেষ ফজিলত বা ইবাদতের নির্দেশনা নেই। রমজানের প্রতিটি দিন ও রাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ, বিশেষত শেষ দশকের লাইলাতুল কদরের রাতগুলো। তবে রমজানের শেষ শুক্রবারকে অন্য কোনো দিনের তুলনায় বেশি ফজিলতপূর্ণ হিসেবে গণ্য করার পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো দলিল নেই।
যারা জুমাতুল বিদার বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত প্রচার করেন, তারা সম্ভবত রমজান মাসের সামগ্রিক গুরুত্ব এবং প্রতিটি শুক্রবারের মর্যাদাকে মিশ্রিত করে এই দিনটিকে আলাদা মর্যাদা দিয়ে থাকেন। তবে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে যে, ইসলামের প্রতিটি ইবাদত ও আমল কেবল সহিহ প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে হতে হবে।
সুতরাং, জুমাতুল বিদা হলো রমজানের শেষ শুক্রবার, কিন্তু এর কোনো আলাদা ফজিলত নেই যা কোরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
জুমাতুল বিদার হাদিস
জুমাতুল বিদার হাদিস সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। ইসলামী শরিয়তে যে কোনো ইবাদতের সঠিক পদ্ধতি এবং ফজিলত সম্পর্কে সহিহ হাদিসের উপর নির্ভর করা অত্যন্ত জরুরি। জুমাতুল বিদা সম্পর্কে বিশেষ কোনো সহিহ হাদিস নেই, যা এই দিনের আলাদা কোনো ফজিলত নির্ধারণ করে। তবে জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস রয়েছে, যা প্রত্যেক মুসলিমের জানা উচিত।
উল্লেখিত হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, জুমার দিনকে ইসলাম অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি দিন হিসেবে গণ্য করেছে। যেমন:
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদিস:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনেই হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।" (মুসলিম: ৮৫৪)
এই হাদিস থেকে স্পষ্ট হয় যে, জুমার দিন সৃষ্টির সূচনা ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির জন্য সম্মানিত।
আরেকটি হাদিস:
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, "যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করে, এরপর জুমা পড়তে উপস্থিত হয় এবং মনোযোগ দিয়ে নীরবে খুতবা শোনে, তার এই জুমা এবং আগামী জুমার মধ্যকার এবং অতিরিক্ত আরও তিন দিনের ছোট গুনাহ ক্ষমা করা হবে।" (মুসলিম: ৮৫৭)
এই হাদিস থেকে দেখা যায় যে, জুমার দিনের ইবাদত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এবং এর মাধ্যমে গুনাহ মাফ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, জুমাতুল বিদা নিয়ে আলাদা কোনো হাদিস নেই। রমজানের শেষ জুমার দিনে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে বেশি ইবাদত করা যেতে পারে, তবে বিশেষ কোনো ফজিলতপূর্ণ নামাজ বা আমল এই দিনে করা উচিত বলে সহিহ হাদিসে কোনো বর্ণনা নেই। এজন্য মুসলিমদের উচিত রমজানের প্রতিটি দিনের মতোই জুমাতুল বিদাকে দেখা এবং আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করা।
জুমাতুল বিদার ফজিলত
জুমাতুল বিদা নিয়ে যত ভুল ধারণা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বিষয় আমরা জেনেছি। জুমাতুল বিদা সম্পর্কে যে বিভ্রান্তি মুসলিম সমাজে রয়েছে, তা দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি সাধারণ জুমার দিন, এবং এই দিনে আলাদা কোনো ফজিলত বা বিশেষ আমলের নির্দেশনা নেই, যেমনটি অনেকেই ভুলভাবে প্রচার করে থাকেন।
যদিও রমজান মাস মুসলিমদের জন্য বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী এবং এর প্রতিটি দিন ও রাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ, কিন্তু রমজানের শেষ জুমা বা জুমাতুল বিদা কোনো সহিহ হাদিস দ্বারা আলাদাভাবে গুরুত্বপ্রাপ্ত নয়। এটি মূলত একটি প্রচলিত রীতি হিসেবে দেখা যায়, যা ইসলামের মূল শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
অনেকে বিশ্বাস করে যে রমজানের শেষ জুমার দিন বিশেষ কিছু আমল করলে বেশি ফজিলত পাওয়া যাবে। কিন্তু ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে যে, আমল বা ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর নির্দেশ এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার ভিত্তিতে হতে হবে। কোরআন ও সহিহ হাদিসে রমজানের শেষ জুমা সম্পর্কে কোনো বিশেষ নির্দেশনা বা অতিরিক্ত ফজিলতের কথা উল্লেখ নেই।
তবে, জুমার দিন সবসময়ই ফজিলতপূর্ণ, এবং বিশেষ করে রমজানে প্রতিটি জুমার দিন আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি সুযোগ। যেমন হাদিসে এসেছে যে, হযরত আদম (আ.) এর সৃষ্টি, জান্নাতে প্রবেশ এবং পৃথিবীতে প্রেরণ সবই জুমার দিনে হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিনকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ দিন হিসেবে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তা জুমাতুল বিদার সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত নয়।
সুতরাং, মুসলিমদের উচিত বিদআত থেকে বিরত থাকা এবং প্রতিটি জুমার দিনকেই গুরুত্ব সহকারে পালন করা।
জুমাতুল বিদার গুরুত্ব
জুমাতুল বিদার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চান? ইতিমধ্যেই আমরা জুমাতুল বিদা নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেছি। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত কোরআন ও সহিহ হাদিসের উপর ভিত্তি করে ইবাদত করা এবং কোনো বিভ্রান্তিতে না পড়া। জুমাতুল বিদা নিয়ে যেসব ভুল ধারণা মুসলিম সমাজে প্রচলিত রয়েছে, সেগুলোকে দূর করা গুরুত্বপূর্ণ।
জুমাতুল বিদার গুরুত্বের বাস্তবতা:
জুমাতুল বিদা সম্পর্কে ইসলামিক শরিয়তে কোনো আলাদা ফজিলত, গুরুত্ব, বা বিশেষ আমলের কথা উল্লেখ নেই। এটি মূলত রমজানের শেষ জুমার দিন, এবং মুসলিম সমাজে এটি বিদায়ী জুমা হিসেবে পরিচিত। অনেকেই ভুলভাবে মনে করেন যে, এই দিনটি অন্য জুমার দিনগুলোর চেয়ে আলাদা বা বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ, যা সহিহ হাদিসের আলোকেও ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিন সম্পর্কে অনেক হাদিসে গুরুত্ব আরোপ করেছেন, তবে বিশেষ করে জুমাতুল বিদা সম্পর্কে কোনো হাদিস পাওয়া যায়নি। তাই এই দিনটি আলাদাভাবে পালন করা বা বিশেষ কোনো আমল করা বিদআত হিসেবে গণ্য হবে, যা ইসলামে অনুমোদিত নয়।
কেন জুমাতুল বিদা নিয়ে ভুল ধারণা থেকে বের হওয়া উচিত?
- বিদআত থেকে বিরত থাকা: ইসলাম কোনো ধরনের নতুন প্রথা বা বিদআতকে অনুমোদন দেয় না। নবীজির (সা.) শিক্ষা অনুযায়ী, আমরা কেবল সেই ইবাদতই করব যা আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল নির্দেশ দিয়েছেন। তাই জুমাতুল বিদাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পালন করা একটি ভুল প্রচলন।
- জুমার দিনের ফজিলত: জুমার দিন, সাধারণভাবে, সপ্তাহের সেরা দিন এবং এই দিনের ফজিলত অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় বেশি। তবে এটি সব জুমার জন্য প্রযোজ্য, বিশেষ কোনো জুমা যেমন রমজানের শেষ জুমাকে আলাদা করে দেখার কোনো সহিহ ভিত্তি নেই।
- আসল ফজিলতের দিকে মনোযোগ: রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লাইলাতুল কদর। মুসলিমদের উচিত এই রাতের ফজিলতপূর্ণ ইবাদত ও তাওবার প্রতি মনোযোগ দেওয়া, কেবলমাত্র জুমাতুল বিদার দিকে নয়।
সারমর্ম:
জুমাতুল বিদা অন্য জুমার দিনের মতোই একটি সাধারণ জুমা। এতে আলাদা করে কোনো বিশেষ ফজিলত নেই। এজন্য আমাদের উচিত কেবল কোরআন ও সহিহ হাদিসের ভিত্তিতে ইবাদত করা এবং প্রচলিত ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা।
জুমাতুল বিদা আলোচনা
জুমাতুল বিদা নিয়ে যেসব ভুল ধারণা রয়েছে, তা থেকে মুসলিমদের সঠিক ধারণা অর্জন করা উচিত। যেমন আপনি উল্লেখ করেছেন, ইসলামে জুমার দিন সবসময়ই একটি ফজিলতপূর্ণ দিন। তবে, জুমাতুল বিদা সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো ফজিলত বা বিশেষ আমলের কথা কোরআন বা হাদিসে উল্লেখ নেই।
জুমাতুল বিদা: প্রচলিত ভুল ধারণা
অনেকেই মনে করেন যে, রমজানের শেষ জুমার দিনটি অন্য জুমার দিনগুলোর তুলনায় আলাদা এবং এর ফজিলত বেশি। বাস্তবে, এই দিনটি অন্যান্য জুমার দিনের মতোই একটি সাধারণ জুমা। তবে যেহেতু এটি রমজানের মধ্যে পড়ে, তাই রমজানের ফজিলত এবং বিশেষ করে রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বের কারণে অনেকেই এই দিনকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেন। কিন্তু, কোরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে জুমাতুল বিদার জন্য আলাদা কোনো বিধান বা ফজিলত নির্ধারিত হয়নি।
জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত
জুমার দিন ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ একটি দিন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
- আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "জুমার দিন মুসলমানদের সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দিন। এই দিনে আল্লাহ তাদের গুনাহ মাফ করেন এবং তাদের জন্য অনেক ফজিলত রয়েছে।" (মুসলিম: ৮৫৪)
- জুমার দিনে বিশেষ দোয়া কবুল হওয়ার সময় রয়েছে, যা হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে (বুখারি, মুসলিম)।
জুমাতুল বিদা নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা দূর করা
যদিও রমজানের শেষ জুমা একটি প্রথাগত উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবে এটি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ নয়। মুসলিমদের উচিত নিজেদের ইবাদত ও আমল কোরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে করা। বিশেষ আমল বা ইবাদত যদি নির্দিষ্ট কোনো দলিল ছাড়া করা হয়, তা বিদআতের মধ্যে পড়ে। তাই জুমাতুল বিদাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া বা এর সাথে বিশেষ কোনো আমল বা ফজিলত সংযুক্ত করা শরিয়তের দৃষ্টিতে সঠিক নয়।
সারমর্ম:
- জুমাতুল বিদা নিয়ে কোনো সহিহ হাদিস বা কোরআনি দলিল নেই যা এটি অন্য জুমার দিনের চেয়ে আলাদা করে।
- যেহেতু এটি রমজানের জুমার দিন, রমজানের গুরুত্ব এবং জুমার দিনের ফজিলত বিবেচনায় রেখে আপনি ইবাদত করতে পারেন, তবে এটিকে বিশেষ আমল বা ফজিলতের দিন মনে করা শরিয়তসম্মত নয়।
- ইসলাম শুধুমাত্র সহিহ প্রমাণিত ইবাদত ও আমলকে অনুমোদন দেয়।
জুমাতুল বিদা আল কাউসার
জুমাতুল বিদা আল কাউসার কিতাবে কি বলা হয়েছে? আল কাউসার কিতাবেও একই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, জুমাতুল বিদা বলতে সাধারণত রমজান মাসের শেষ জুমার দিনকে বোঝানো হয় এবং এটি অনেকের কাছে একটি ফজিলতপূর্ণ দিন হিসেবে প্রচলিত আছে। তবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে জুমাতুল বিদা সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে কোনো কোরআন বা হাদিসে উল্লেখ নেই যে এটি বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ বা অন্য জুমার দিন থেকে আলাদা।
আল কাউসার কিতাবে জুমাতুল বিদার উল্লেখ:
১. জুমাতুল বিদার কোনো আলাদা ফজিলত নেই:
আল কাউসার কিতাবে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জুমাতুল বিদা সম্পর্কে কোরআন বা হাদিসে আলাদা করে কোনো ফজিলতের কথা উল্লেখ নেই। এটি মুসলিম সমাজে প্রচলিত একটি প্রথা হিসেবে পালন করা হয়। অনেকেই মনে করে এই দিন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটি শরীয়তের ভিত্তিতে সঠিক নয়।
২. বিশেষ আমল করা বিদআত:
অনেক মুসলিম জুমাতুল বিদার দিন বড় মসজিদে জমায়েত হন এবং বিশেষভাবে নামাজ আদায় বা অন্যান্য আমল করে থাকেন, যা শরিয়তে অনুমোদিত নয়। আল কাউসারে এও বলা হয়েছে যে, শরীয়ত নির্দেশিত আমলগুলোই আমাদের করতে হবে এবং যেসব আমল কোরআন ও সহিহ হাদিসে বর্ণিত নেই, সেগুলোকে আমল করা বিদআত হিসেবে গণ্য হবে।
আল কাউসার কিতাবে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জুমাতুল বিদা সম্পর্কে কোরআন বা হাদিসে আলাদা করে কোনো ফজিলতের কথা উল্লেখ নেই। এটি মুসলিম সমাজে প্রচলিত একটি প্রথা হিসেবে পালন করা হয়। অনেকেই মনে করে এই দিন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটি শরীয়তের ভিত্তিতে সঠিক নয়।
২. বিশেষ আমল করা বিদআত:
অনেক মুসলিম জুমাতুল বিদার দিন বড় মসজিদে জমায়েত হন এবং বিশেষভাবে নামাজ আদায় বা অন্যান্য আমল করে থাকেন, যা শরিয়তে অনুমোদিত নয়। আল কাউসারে এও বলা হয়েছে যে, শরীয়ত নির্দেশিত আমলগুলোই আমাদের করতে হবে এবং যেসব আমল কোরআন ও সহিহ হাদিসে বর্ণিত নেই, সেগুলোকে আমল করা বিদআত হিসেবে গণ্য হবে।
৩. জুমার দিন ফজিলতপূর্ণ, তবে আলাদা কোনো জুমা নয়:
প্রতিটি জুমার দিন ফজিলতপূর্ণ, যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তবে জুমাতুল বিদাকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ কোনো আমল বা ফজিলত মনে করা ঠিক নয়। জুমার দিনে আমাদের করণীয় হলো, সুন্দরভাবে অজু করা, সময়মতো মসজিদে গিয়ে খুতবা শোনা, এবং নামাজ আদায় করা। কিন্তু রমজানের শেষ জুমা বলে আলাদা কোনো আমল বা ইবাদতের আদেশ দেওয়া হয়নি।
সারসংক্ষেপ:
জুমাতুল বিদা সম্পর্কে কোরআন বা হাদিসে নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা বা ফজিলত উল্লেখ নেই। এটি একটি প্রচলিত প্রথা মাত্র। আল কাউসার কিতাবেও বলা হয়েছে, এই দিনটি অন্য জুমার দিনের মতোই একটি সাধারণ জুমা এবং এতে বিশেষ কোনো আমল করার প্রয়োজন নেই।
জুমাতুল বিদার আমল
জুমাতুল বিদা নিয়ে যত ভুল ধারণা রয়েছে আশা করি আমাদের আর্টিকেল পড়ে সবগুলো সঠিক হয়ে যাবে। তবুও অনেকে আছে যারা জুমাতুল বিদার আমল সম্পর্কে জানতে চাই। ইসলামে জুমাতুল বিদা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট আমল বা বিশেষ নির্দেশনা নেই। যেমন আপনি উল্লেখ করেছেন, যদি এই দিনের বিশেষ কোনো গুরুত্ব থাকত, তাহলে অবশ্যই আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এই দিনটি বিশেষভাবে পালন করতেন। কিন্তু, তাদের জীবনে এমন কোনো উদাহরণ বা নির্দেশনা পাওয়া যায় না।
জুমাতুল বিদার জন্য কোনো নির্দিষ্ট আমল নেই:
যেহেতু জুমাতুল বিদা কোরআন ও হাদিসে ভিত্তিক কোনো বিশেষ দিন নয়, তাই এই দিনে আলাদা কোনো আমল করার প্রয়োজন নেই। তবে, প্রতিটি জুমার দিন মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ দিন। তাই প্রতিটি জুমার দিনে যেমন আমল করতে হয়, জুমাতুল বিদার দিনেও সেই একই আমল করতে হবে।
জুমার দিনে সাধারণ আমল:
১. তাড়াতাড়ি গোসল করা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া:
প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, পরিষ্কার পোশাক পরে এবং তাড়াতাড়ি মসজিদে যায়, তার জন্য বিশেষ বরকত রয়েছে।" (বুখারি)
২. খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা:
জুমার দিন খুতবা দেওয়া হয়, যা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনার একটি অংশ। খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা এবং নামাজের সময় নীরব থাকা সুন্নত।
৩. সুরা কাহাফ পাঠ করা:
হাদিসে বর্ণিত আছে যে, জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করলে তা বিশেষ সাওয়াবের কাজ। এটি জুমার দিন করা একটি ভালো আমল।
৪. জুমার নামাজ পড়া ও দোয়া করা:
জুমার দিন একটি বিশেষ সময় থাকে যখন আল্লাহতায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করেন। সেই সময়কে কাজে লাগিয়ে দোয়া করা উচিত।
জুমাতুল বিদার নির্দিষ্ট কোনো আমল বা ফজিলত শরিয়তে নেই। প্রতিটি জুমার দিনে যেসব সুন্নত ও আমল করা হয়, সেগুলোই করা উচিত, এবং রমজানের শেষ জুমা বলে কোনো নতুন আমল করা বা বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
জুমাতুল বিদায় করনীয়
জুমাতুল বিদায় করনীয় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চাই। আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে গিয়েছেন।
জুমাতুল বিদায় বিশেষ কোনো করণীয় নেই:
ইসলামিক শরীয়তে জুমাতুল বিদা নামে কোনো বিশেষ দিন বা নির্দিষ্ট ফজিলতপূর্ণ আমল নেই। এটি কেবল রমজান মাসের শেষ জুমার দিন, এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে অন্যান্য জুমার দিনের মতোই একটি সাধারণ দিন। রমজানের শেষ জুমা বলে আলাদা করে কোনো আমল বা ইবাদত করার প্রয়োজন নেই।
সাধারণ জুমার দিনের করণীয়:
প্রত্যেক জুমার দিন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে জুমার দিনের করণীয় সম্পর্কে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোই জুমাতুল বিদার দিনও পালন করতে হবে:
- তাড়াতাড়ি গোসল করা ও পরিষ্কার পোশাক পরা: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমার দিনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। জুমার দিনে গোসল করা সুন্নত।
- তাড়াতাড়ি মসজিদে গমন করা: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদে উপস্থিত হওয়া এবং খুতবা শোনার জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত।
- খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা: খুতবা শোনা জুমার নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং খুতবার সময় নীরব থাকা উচিত।
- সুরা কাহাফ পাঠ করা: হাদিসে বর্ণিত আছে যে, জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করলে তা বিশেষ সাওয়াবের কাজ।
- জুমার নামাজ আদায় করা ও দোয়া করা: জুমার দিনে আল্লাহর কাছে দোয়া কবুলের বিশেষ সময় থাকে। এই সময়ে বেশি বেশি দোয়া করা উচিত।
জুমাতুল বিদা নামে শরীয়তে আলাদা করে কোনো আমল নেই। জুমার দিনের সাধারণ সুন্নত ও আমলগুলোই যথেষ্ট। রমজানের শেষ জুমা বলে কোনো নতুন আমল যোগ করা বা বিশেষ ফজিলত মনে করা শরিয়তের দৃষ্টিতে সঠিক নয়।
আমাদের শেষ কথা
জুমাতুল বিদা নিয়ে যত ভুল ধারণা ছিল আশা করি আজকের এই আর্টিকেল পড়ার পরে এই ভুল ধারণা গুলো থাকবে না। যেহেতু এই দিনটি অনেকেই ফজিলতপূর্ণ মনে করে থাকে তাই এ সম্পর্কে অবশ্যই আমাদেরকে পরিষ্কার ভাবে জেনে নিতে হবে। কারণ কোন ধরনের বিদআত করা আমাদের জন্য উচিত নয়। তাই এই দিনটি বিশেষ ভাবে পালন করার আগে বিষয় গুলো ভালোভাবে জেনে নেবেন।
আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। আশা করি জুমাতুল বিদা সম্পর্কিত ভুল ধারণাগুলো স্পষ্ট হয়েছে এবং আপনি উপকৃত হয়েছেন। যদি ইসলামিক বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে আগ্রহী থাকেন, তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আমরা সবসময় চেষ্টা করি সঠিক ও প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে, যাতে মুসলিমদের জন্য দ্বীনের জ্ঞান সহজ এবং সুস্পষ্ট হয়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে থাকার তাওফিক দান করুন।
Comments
Post a Comment