জুমাতুল বিদা ও ঈদের করণীয় আমল সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে সঠিক জায়গাতে এসেছেন। ঈদের সময় আমাদের বেশ কিছু করণীয় রয়েছে একজন মুসলিম হিসেবে অবশ্যই আমাদেরকে এ বিষয়ে জেনে রাখতে হবে।
আপনি যদি মনে করে থাকেন যে জুমাতুল বিদা উপলক্ষে আমল করবেন তাহলে আপনার জুমাতুল বিদা ও ঈদের করণীয় আমল এই বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। তাহলে চলুন বিষয় গুলো জেনে নেওয়া যাক।
জুমাতুল বিদা ও ঈদের করণীয় আমল
জুমাতুল বিদা ও ঈদের করণীয় আমল নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। আমরা মুসলিম হিসেবে আল্লাহর প্রতি কিন্তু আমাদের মুসলিমদের মধ্যে বিভিন্ন বিভাজন রয়েছে। সাধারণত আমরা একেক জন একেক রকম বিষয় বিশ্বাস করে থাকি। আপনি যদি একজন মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার জুমাতুল বিদা সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। কারণ অনেকেই এই দিনটি বিশ্বাস করে থাকে এবং অনেক গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকে।
জুমাতুল বিদা
জুমাতুল বিদা শব্দটির অর্থ হলো "শেষ জুমা" বা রমজান মাসের শেষ শুক্রবার। যদিও ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী জুমাতুল বিদা কোনো বিশেষ আমলের দিন নয়, তবুও এটি মুসলিমদের মধ্যে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। হাদিস বা কোরআনে বিশেষ কোনো আমল বা ইবাদতের কথা এই দিনের জন্য নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। তবে যেহেতু রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত বরকতময়, তাই শেষ শুক্রবারেও অন্যান্য দিনের মতো ইবাদত করা যেতে পারে।
সাধারণভাবে করণীয় আমল:
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।
- কুরআন তিলাওয়াত করা।
- দান-সদকা করা।
- আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইস্তিগফার ও দোয়া করা।
জুমাতুল বিদা সম্পর্কে অতিরিক্ত কোনো আমল না করে সাধারণ জুমার দিনের মতো করাই উত্তম এবং বিদআত থেকে বিরত থাকা জরুরি।
ঈদের দিনের করণীয় আমল
ঈদের দিন মুসলিমদের জন্য বিশেষ আনন্দের দিন। ইসলামে ঈদের দিনের আমলগুলো নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সাহায্য করে।
করণীয় আমল:
- সকালে ঘুম থেকে ওঠা: ফজরের নামাজের আগে ঘুম থেকে ওঠা সুন্নত।
- মেসওয়াক করা: দাঁত পরিষ্কার করা এবং মেসওয়াক ব্যবহার করা।
- গোসল করা: ঈদের সকালে গোসল করা উত্তম।
- সুন্দর পোশাক পরিধান করা: সাধ্যমতো উত্তম পোশাক পরিধান করা, যা পরিচ্ছন্ন এবং ইসলামিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে।
- সুগন্ধি ব্যবহার করা: পুরুষদের জন্য হালকা সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত।
- ঈদগাহে যাওয়ার আগে কিছু খাওয়া (ঈদুল ফিতরে): নামাজের আগে খেজুর বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া সুন্নত।
- সাদাকায়ে ফিতর আদায় করা (ঈদুল ফিতরে): ঈদের নামাজের আগে ফিতরা আদায় করা।
- তাকবির পড়া: ঈদগাহ যাওয়ার পথে "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার" ইত্যাদি তাকবির পড়া সুন্নত।
- ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করা: ঈদগাহে যাওয়ার এবং আসার সময় ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করা।
- পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া: যদি সম্ভব হয়, তাহলে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া উত্তম।
ঈদের এই সুন্নতগুলো পালন করলে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
জুমাতুল বিদা কি
জুমাতুল বিদা কি? এই বিষয়ে আলোচনা করব। জুমাতুল বিদা বলতে বোঝানো হয় রমজান মাসের শেষ জুমার দিন, যেটি মুসলিমদের কাছে আলাদা তাৎপর্য বহন করে। যদিও ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী এই দিনে কোনো নির্দিষ্ট আমল বা বিশেষ নির্দেশনা নেই, তারপরও অনেক মুসলিম এই দিনটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পালন করে থাকেন।
প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার মুসলিমদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনকে জুমার দিন বলা হয় এবং সপ্তাহের সবচেয়ে বরকতময় দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হাদিস ও কুরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে, যেমন:
- জুমার দিনকে "ইয়াওমুল জুমআ" বলা হয়, এবং এটি মুসলিমদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিনের মতো।
- এই দিনে সূরা কাহফ পড়া, দোয়া ও ইস্তিগফার করা বিশেষ ফজিলতের কাজ বলে হাদিসে উল্লেখ আছে।
তবে জুমাতুল বিদা অর্থাৎ রমজানের শেষ জুমা সম্পর্কে ইসলামে বিশেষ কোনো বিধান নেই। এটি সাধারণ জুমার দিনের মতোই। রমজানের অন্যান্য দিনের মতো এই দিনেও বেশি ইবাদত করা ও নেকি অর্জনের চেষ্টা করা উচিত।
জুমাতুল বিদা পালন করার কারণ
জুমাতুল বিদা ও ঈদের করণীয় আমল সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। আপনি যদি একজন সচেতন মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার জুমাতুল বিদা পালন করার কারণ কি? এ বিষয়ে জেনে রাখা উচিত। জুমাতুল বিদা পালনের পিছনে যেসব যুক্তি সাধারণত মানুষের মাঝে প্রচলিত, তার মূল কারণ রমজান মাস এবং জুমার দিনের গুরুত্ব। রমজান মাস ইসলামের পবিত্র মাস, যা বরকত, রহমত ও মাগফিরাতের সময় হিসেবে বিবেচিত। অন্যদিকে, জুমার দিন সাপ্তাহিক ইবাদতের জন্য সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ দিন। এই দুটি বিষয় যখন একত্রিত হয়—রমজান মাসের শেষ জুমা—তখন তা অনেকের জন্য আলাদা গুরুত্ব বহন করে।
তবে ইসলামের মূল শিক্ষার দিকে তাকালে দেখা যায়, হাদিস বা কোরআনে বিশেষভাবে "জুমাতুল বিদা" বলে কোনো আমল বা ইবাদতের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এটি মূলত মানুষদের মধ্যেই প্রচলিত একটি বিষয়, যেখানে তারা রমজানের শেষ জুমাকে আলাদাভাবে পালন করার চেষ্টা করে। ইসলামে আমল বা ইবাদত করতে হলে অবশ্যই কোরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে করতে হবে। কোনো ইবাদত বা আমলের জন্য দলিল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেন আমরা সঠিক পথ অনুসরণ করতে পারি এবং বিদআত থেকে বিরত থাকতে পারি।
জুমার দিনকে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরা হয়। যেমন হাদিসে এসেছে:
- "জুমার দিনে ফজিলতপূর্ণ আমল করা উত্তম এবং এই দিনে দোয়া কবুল করা হয়।" (সহীহ মুসলিম)
তাই জুমাতুল বিদার জন্য বিশেষ কোনো আমল বা দিন পালন না করে, রমজানের অন্যান্য জুমার মতোই নিয়মিত ইবাদত চালিয়ে যাওয়া উচিত। সঠিক দলিলের ভিত্তিতে ইবাদত করলে তা আল্লাহর কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে এবং বিদআত থেকে মুক্ত থাকবে।
সংক্ষেপে, জুমাতুল বিদা পালন না করলেও, রমজানের প্রতিটি দিনই ইবাদত ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
জুমাতুল বিদার তাৎপর্য
জুমাতুল বিদার তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চান? একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই জুমাতুল বিদার যে সকল তাৎপর্য রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে জুমাতুল বিদার বিশেষ কোনো তাৎপর্য নেই যা কোরআন ও হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে। ইসলামে যেকোনো আমল বা ইবাদতের জন্য সঠিক দলিল প্রয়োজন, এবং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ এই দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করেননি।
জুমাতুল বিদা অর্থাৎ রমজানের শেষ জুমা, অনেকের মধ্যে একটি বিশেষ দিন হিসেবে পরিচিত হলেও ইসলামে এমন কোনো দলিল নেই যা এর বিশেষ আমল বা তাৎপর্য নির্দেশ করে। যেহেতু নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবীগণ এই দিনটি নিয়ে কোনো বিশেষ আমল করেননি, তাই ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি সাধারণ জুমার দিন হিসেবে পালন করা উচিত।
তবে, রমজান মাসের প্রতিটি দিনেই ইবাদত, দোয়া ও নেকি অর্জনের গুরুত্ব অপরিসীম, এবং যেকোনো জুমার দিনেই আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং ইবাদত করা ফজিলতপূর্ণ।
সংক্ষেপে:
জুমাতুল বিদা ইসলামী শরীয়তের নির্দিষ্ট কোনো বিধান নয়, এবং ইসলামের মূল উৎসগুলোতে এর কোনো আলাদা তাৎপর্য নেই। তাই মুসলিমদের উচিত প্রতিটি আমল কোরআন ও হাদিসের আলোকে করা, যাতে তারা সঠিক পথে থাকতে পারেন এবং বিদআত থেকে বাঁচতে পারেন।
জুমাতুল বিদার ফজিলত
জুমাতুল বিদা ও ঈদের করণীয় আমল সম্পর্কে ইতিমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। যারা এই দিনটি পালন করে থাকে সাধারণত তারা জুমাতুল বিদার ফজিলত সম্পর্কে জানতে চাই। জুমার দিন ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবে গণ্য হয় এবং এই দিনে অনেক বড় বড় ঘটনাও ঘটেছে। তবে, জুমাতুল বিদা অর্থাৎ রমজানের শেষ জুমার দিনকে বিশেষভাবে পালনের কোনো প্রমাণ নেই কোরআন ও হাদিসে।
অনেকেই মনে করে থাকেন, রমজানের শেষ জুমার দিন আলাদা ফজিলতপূর্ণ, কিন্তু এ ধরনের বিশ্বাসের ভিত্তি শরীয়তের দিক থেকে নেই। যে কোনো জুমার দিন রমজানের জুমার মতোই গুরুত্ব বহন করে, কারণ কোরআন বা হাদিসে "জুমাতুল বিদা" বলে আলাদা কোনো বিশেষ ইবাদত বা আমলের উল্লেখ নেই।
তবে সত্য এই যে, রমজানের প্রতিটি দিনেই ইবাদত বেশি ফজিলতপূর্ণ। রমজান হলো বরকতময় মাস, যেখানে নেক আমলগুলো দ্বিগুণ বা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। তাই রমজানের যেকোনো জুমার দিনেও ইবাদতের গুরুত্ব বেশি, তবে তা নির্দিষ্ট কোনো বিশেষ দিনের জন্য নয়।
করণীয়:
- রমজানের জুমার দিনগুলোতে যেমন ইবাদত করেন, জুমাতুল বিদার দিনেও সেই ইবাদতগুলো করুন।
- বিদআত বা নতুনভাবে প্রবর্তিত আমল থেকে বিরত থাকুন।
- রমজানের প্রতিটি দিনকে ইবাদত, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইস্তিগফার, ও দান-সদকার মাধ্যমে পূর্ণ করার চেষ্টা করুন।
এভাবে আপনি সঠিক পথে থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারবেন।
ঈদের দিনে বর্জনীয় কাজ
ঈদের দিনে বর্জনীয় কাজ কোন গুলো অবশ্যই আমাদেরকে জেনে রাখতে হবে। ইতিমধ্যেই ঈদের দিনের করণীয় কাজ গুলো সম্পর্কে জেনেছি। ঈদের দিনটি মুসলিমদের জন্য আনন্দ এবং ইবাদতের দিন হলেও, ইসলামের সীমার মধ্যে থেকে আনন্দ পালন করাই একজন প্রকৃত মুসলিমের কর্তব্য। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন যে কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তা মেনে চলা উচিত।
ঈদের দিনে বর্জনীয় কাজগুলো:
- অমুসলিমদের আচরণ বা সংস্কৃতি অনুসরণ করা: ঈদের দিনে অমুসলিমদের আচার-আচরণ, যেমন—অনুচিত পোশাক, খাবার বা অনৈসলামিক রীতিনীতি অনুসরণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
- অশ্লীলতা ও খারাপ আচরণ: বর্তমানে ঈদের আনন্দে অনেকেই অশ্লীল ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। অশ্লীল পোশাক, কুরুচিপূর্ণ আচরণ, বেপর্দা চলাফেরা বা নাচ-গান—এসব থেকে অবশ্যই দূরে থাকা উচিত।
- খোলামেলা ও অনুচিত পোশাক পরা: ঈদের দিনেও ইসলামের পোশাকের নিয়ম মেনে চলতে হবে। খোলামেলা পোশাক, যা শরীয়ত বিরোধী, তা বর্জন করা উচিত।
- নারী-পুরুষের পোশাক পরিবর্তন বা ভিন্ন পোশাক পরা: ইসলামে নারীদের এবং পুরুষদের জন্য আলাদা পোশাকের বিধান রয়েছে। তাই ঈদের আনন্দে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত যা ইসলামী পোশাকশৃঙ্খলার সাথে সাংঘর্ষিক।
- বাদ্যযন্ত্র বাজানো বা নাচানাচি করা: ইসলামের দৃষ্টিতে গান-বাজনা এবং নাচানাচি একটি হারাম কাজ। ঈদের আনন্দে এ ধরনের কোনো কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে।
- নারীদের বেপর্দা অবস্থায় ঘরের বাইরে বের হওয়া: ইসলাম নারীদের জন্য পর্দার গুরুত্ব দিয়েছে। ঈদের দিনেও নারীদের বেপর্দা অবস্থায় বাইরে যাওয়া বা নিজেকে প্রকাশ করা বর্জনীয়।
- অতিরিক্ত ব্যয়বহুল বা অপচয় করা: ঈদের দিনে অনেকেই আনন্দ করতে গিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করেন, যা ইসলামে অপচয় হিসেবে বিবেচিত। অপচয় করা থেকে বিরত থাকা উচিত এবং সঠিকভাবে সম্পদের ব্যবহার করা উচিত।
সংক্ষেপে:
ঈদ আনন্দের দিন হলেও ইসলামী সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে সেই আনন্দ উপভোগ করা উচিত। ইসলামের নিষেধ করা কাজগুলো এড়িয়ে চলা এবং সঠিকভাবে ইবাদত ও হালাল উপায়ে আনন্দ করার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত ঈদ আনন্দ।
ঈদের দিনের ফজিলত
জুমাতুল বিদা ও ঈদের করণীয় আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ঈদ শুধু আনন্দের দিন নয়, এটি আল্লাহর ইবাদত এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন। শরীয়ত অনুযায়ী ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারলে ঈদের প্রকৃত ফজিলত উপলব্ধি করা সম্ভব হয়।
ঈদের দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত:
ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা ইসলামে দুইটি বিশেষ দিন যা আল্লাহর ইবাদত ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য নির্ধারিত। ঈদুল ফিতর রমজানের রোজা শেষে আসে, আর ঈদুল আযহা আসে কোরবানি করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ নিয়ে। ঈদের দিনগুলোতে আল্লাহর নির্দেশিত আমলগুলো পালন করলে এ দিনগুলোর ফজিলত আরও বৃদ্ধি পায়।
করণীয়:
- ঈদের নামাজ আদায় করা।
- ঈদের দিন পবিত্রতা রক্ষা করা এবং উত্তম পোশাক পরিধান করা।
- একে অপরের সাথে খুশি ভাগাভাগি করা এবং দোয়া করা।
- যাকাতুল ফিতর (ঈদুল ফিতরের জন্য) বা কোরবানি (ঈদুল আযহার জন্য) আদায় করা।
বর্জনীয় কাজ:
- অশ্লীলতা, অপব্যয়, বা হারাম কাজ করা।
- ইসলামের সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়ে আনন্দ করা।
- খোলামেলা পোশাক পরা বা সামাজিক অনুশাসনের বাইরে আচরণ করা।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, ঈদের প্রকৃত আনন্দ এবং ফজিলত তখনই উপভোগ করা সম্ভব, যখন আমরা শরীয়তের নিয়ম মেনে আল্লাহর ইবাদত এবং সঠিকভাবে আনন্দ উদযাপন করি।
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম আমরা অনেকেই জানিনা। ঈদের নামাজ সাধারণ পাঁচ ওয়াক্তের নামাজের থেকে একটু আলাদা। তবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের সঠিকভাবে এ নামাজ আদায় করা উচিত। এবার ঈদের নামাজের নিয়ম সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।
ঈদের নামাজের নিয়ম:
- নিয়ত করা:
- "নিয়ত করছি দুই রাকাত ওয়াজিব ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য, একমাত্র আল্লাহর জন্য, আল্লাহু আকবার।"
- তাকবিরে তাহরিমা:
- প্রথমে স্বাভাবিক নামাজের মতো তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে হাত বেঁধে নিতে হবে। এরপর সানা (سُبْحَانَكَ اللّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ) পাঠ করতে হবে।
- তিনটি অতিরিক্ত তাকবির:
- সানা পড়ার পরে ইমাম তিনটি অতিরিক্ত তাকবির দিবেন।
- প্রথম এবং দ্বিতীয় তাকবিরে হাত উঠিয়ে ছেড়ে দিতে হবে।
- তৃতীয় তাকবিরে হাত উঠিয়ে আবার বেঁধে নিতে হবে।
- কিরাত:
- এরপর ইমাম সুরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সুরা পাঠ করবেন। সাধারণত সুরা আল-আ'লা বা অন্য কোন ছোট সুরা পড়া হয়।
- স্বাভাবিক নামাজের মতই রুকু এবং সিজদা করতে হবে এবং প্রথম রাকাত শেষ হবে।
- দ্বিতীয় রাকাত:
- দ্বিতীয় রাকাত শুরু করার পরে ইমাম সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা পাঠ করবেন।
- এরপর ইমাম তিনটি অতিরিক্ত তাকবির দিবেন, প্রতিটি তাকবিরে হাত উঠিয়ে ছেড়ে দিতে হবে।
- তৃতীয় তাকবিরের পর, চতুর্থ তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলে রুকুতে চলে যেতে হবে এবং নামাজের বাকি অংশ স্বাভাবিক নামাজের মতো শেষ করতে হবে।
- খুতবা শোনা:
- ঈদের নামাজের পর ইমাম খুতবা দিবেন। খুতবা শোনা ওয়াজিব, তাই খুতবা না শুনে ঈদগাহ ত্যাগ করা ঠিক নয়।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়:
- ঈদের নামাজে আজান বা ইকামত নেই।
- ঈদের নামাজ দুই রাকাত হয়।
- ঈদগাহে গেলে তাকবির (আল্লাহু আকবার) পড়তে পড়তে যেতে হয়।
এই নিয়ম মেনে ঈদের নামাজ আদায় করা হলে তা হবে সহীহ এবং সুন্নত অনুযায়ী।
ঈদের দিনের দোয়া
ঈদের দিনের দোয়া এবং শুভেচ্ছা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে তারা ঈদের দিন পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানাতেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন, যেন তাদের ইবাদত কবুল হয়।
ঈদের দিনের দোয়া:
ঈদের দিনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, শুকরিয়া আদায় করা এবং আমাদের ইবাদতগুলো কবুল হওয়ার জন্য দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, ঈদের শুভেচ্ছার একটি দোয়া যা সাহাবায়ে কেরাম পরস্পরকে বলতেন:
আরবিঃ
تَقَبَّلَ اللَّهُ مِنَّا وَمِنْكَ
বাংলা উচ্চারণঃ
তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকা
বাংলা অর্থঃ
আল্লাহ তা’আলা আমার এবং আপনার ইবাদতগুলো কবুল করুন।
ঈদের দিনের অন্যান্য দোয়া:
ঈদের দিন আল্লাহর কাছে নিচের বিষয়গুলোর জন্যও দোয়া করতে পারেন:
- আল্লাহর প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
- আপনার জীবনের গুনাহ মাফের জন্য দোয়া।
- পরিবার, সমাজ এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণের জন্য প্রার্থনা।
- ঈদের দিনের আনন্দ এবং ইবাদতের জন্য বিশেষ দোয়া।
উদাহরণ: "হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সকল ইবাদত ও আমল কবুল করুন, আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন, এবং আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। হে আল্লাহ! ঈদের দিনের খুশি আমাদের জীবনে বরকত নিয়ে আসুক এবং আপনি আমাদের রক্ষা করুন সব ধরনের বিপদ থেকে। আমিন।"
এই দোয়াগুলো আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে ঈদের দিনকে আরও অর্থবহ করে তোলা সম্ভব।
আমাদের শেষ কথা
জুমাতুল বিদা ও ঈদের করণীয় আমল গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি একজন মুসলিম হয়ে থাকেন এবং রমজান মাসের শেষ জুমার দিন আমল করতে চান তাছাড়া ঈদের দিনে বিভিন্ন ধরনের আমল করে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত পালন করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক বিষয় যদি আপনি নিয়মিত জানতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েব সাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকে।
Comments
Post a Comment