জ্বিলকদ মাসের ক্যালেন্ডার ১৪৪৫ সমন্ধে অনুসন্ধান তো আমরা প্রায় প্রত্যেকেই করি। কারণ আর সব মাসের মতো এই মাসেও রোজা ও নফল ইবাদত গুলো জানা প্রত্যেকেরই কর্তব্য। এছাড়াও জ্বিলকদ মাসের ছুটির তালিকা ১৪৪৫ সম্বন্ধেও অনেকের জানার আগ্রহ রয়েছে।
তাহলে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক জ্বিলকদ মাসের ক্যালেন্ডার ১৪৪৫ সম্বন্ধে। আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
জ্বিলকদ মাসের ক্যালেন্ডার ১৪৪৫
জ্বিলকদ মাসের ক্যালেন্ডার ১৪৪৫ নিচে দেওয়া হল:
ইংরেজী তারিখ - বার - হিজরী তারিখ
১০ - মে - ২০২৪ - শুক্র - ১ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
১১ - মে - ২০২৪ - শনি - ২ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
১২ - মে - ২০২৪ - রবি - ৩ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
১৩ - মে - ২০২৪ - সোম - ৪ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
১৪ - মে - ২০২৪ - মঙ্গল - ৫ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
১৫ - মে - ২০২৪ - বুধ - ৬ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
১৬ - মে - ২০২৪ - বৃহস্পতি - ৭ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
১৭ - মে - ২০২৪ - শুক্র - ৮ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
১৮ - মে - ২০২৪ - শনি - ৯ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
১৯ - মে - ২০২৪ - রবি - ১০ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
২০ - মে - ২০২৪ - সোম - ১১ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
২১ - মে - ২০২৪ - মঙ্গল - ১২ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
২২ - মে - ২০২৪ - বুধ - ১৩ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
২৩ - মে - ২০২৪ - বৃহস্পতি - ১৪ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
২৪ - মে - ২০২৪ - শুক্র - ১৫ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
২৫ - মে - ২০২৪ - শনি - ১৬ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
২৬ - মে - ২০২৪ - রবি - ১৭ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
২৭ - মে - ২০২৪ - সোম - ১৮ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
২৮ - মে - ২০২৪ - মঙ্গল - ১৯ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
২৯ - মে - ২০২৪ - বুধ - ২০ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
৩০ - মে - ২০২৪ - বৃহস্পতি - ২১ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
৩১ - মে - ২০২৪ - শুক্র - ২২ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
১ - জুন - ২০২৪ - শনি - ২৩ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
২ - জুন - ২০২৪ - রবি - ২৪ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
৩ - জুন - ২০২৪ - সোম - ২৫ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
৪ - জুন - ২০২৪ - মঙ্গল - ২৬ - জ্বি লকদ - ১৪৪৫
৫ - জুন - ২০২৪ - বুধ - ২৭ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
৬ - জুন - ২০২৪ - বৃহস্পতি - ২৮ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
৭ - জুন - ২০২৪ - শুক্র - ২৯ - জ্বিলকদ - ১৪৪৫
জ্বিলকদ মাসের ছুটির তালিকা ১৪৪৫
জ্বিলকদ মাসের ছুটির তালিকা ১৪৪৫ হচ্ছে ইংরেজী জ্বিলকদ মাসের ক্যালেন্ডার ১৪৪৫ এর মে ও জুন মাসের মধ্যে পড়ে। জ্বিলকদ মাস ইসলামী ক্যালেন্ডারের একাদশতম মাস, যা হিজরী বছর অনুযায়ী মে ও জুন মাসের মধ্যে পড়ে থাকে। এই মাসটি ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ একটি মাস হিসেবে গণ্য করা হয়। জ্বিলকদ মাসকে হজের মাসগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে ধরা হয়, এবং নবী কারীম (সা.) এটিকে অত্যন্ত সম্মানের মাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই মাসে বিশেষ কিছু নফল ইবাদত ও রোজার বিধান রয়েছে।
তবে, উল্লেখযোগ্যভাবে, আরবী ক্যালেন্ডারের জ্বিলকদ মাসে কোনো সরকারী বা ধর্মীয় ছুটির তারিখ নির্ধারিত নেই। এটি এমন একটি মাস যেখানে মুসলমানরা ব্যক্তিগত ইবাদত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বিভিন্ন আমল করতে পারেন, যেমন নফল নামাজ, রোজা, এবং অন্যান্য ইবাদত।
রোজা রাখার নিষিদ্ধ দিন সমূহ
রোজা রাখার নিষিদ্ধ দিন সমূহ সম্বন্ধে আপনাদের কি কোন ধারণা আছে? ইসলামে কিছু নির্দিষ্ট দিন রয়েছে যেসব দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই দিনগুলোতে রোজা রাখা হারাম এবং তা ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী পরিপূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। যেসব দিনগুলোতে রোজা রাখা হারাম, সেগুলো হল:
- ঈদুল ফিতরের দিন: ঈদুল ফিতরের দিনটি হলো রমজানের শেষে উদযাপন করা হয়। এই দিনে রোজা রাখা সম্পূর্ণ হারাম।
- ঈদুল আযহার দিন: কোরবানির ঈদ অর্থাৎ ঈদুল আযহার দিনেও রোজা রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
- তাশরীক-এর তিন দিন: ঈদুল আযহার পরবর্তী তিন দিন অর্থাৎ জিলহজ্জ মাসের ১১, ১২, এবং ১৩ তারিখকে তাশরীক-এর দিন বলা হয়, এবং এই তিন দিনও রোজা রাখা হারাম।
এই পাঁচটি দিন বাদে, বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে ইচ্ছা করলে রোজা রাখা যায়, তবে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে যেমন রমজানের রোজা, শাওয়ালের ৬ রোজা, আরাফার দিন, আশুরার দিন ইত্যাদিতে রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
রোজার নিয়ত অবশ্যই করতে হবে, কারণ রোজার জন্য নিয়ত করা শর্ত। রমজানের রোজার জন্য নিয়তের শেষ সময় ফজরের পূর্বেই, তবে নফল রোজার ক্ষেত্রে দুপুরের আগে নিয়ত করা যায়।
ফেতরা গ্রহণ যোগ্য লোকগণ
ফিতরা দেওয়ার জন্য ইসলামী শরিয়তে নির্দিষ্ট কিছু যোগ্য ব্যক্তির উল্লেখ রয়েছে। ফিতরা (সাদকাতুল ফিতর) হলো সেই অর্থ বা খাদ্য যা ঈদুল ফিতরের পূর্বে দরিদ্র ও অভাবী মানুষদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ফেতরা গ্রহণ যোগ্য লোকগণ কোন গুলো বা কোন কোন ব্যক্তিসমূহ ফিতরা গ্রহণের জন্য যোগ্য তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- দরিদ্র ভাই-বোনেরা: যেসব ব্যক্তি নিজ জীবন চালানোর মতো সম্পদ বা সামর্থ্য রাখেন না, তারা ফিতরা গ্রহণের জন্য যোগ্য।
- গরীব প্রতিবেশীরা: যারা আর্থিকভাবে দুর্বল এবং নিজের পরিবার চালানোর জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ রাখেন না।
- নিকটবর্তী ও দূরবর্তী মিসকিনগণ: মিসকিন বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয় যিনি অভাবগ্রস্ত এবং বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে অক্ষম।
- গরীব তালেবে ইলম বা আলেম ওলামাগণ: যারা ধর্মীয় শিক্ষায় মশগুল এবং তাদের জীবনযাত্রার জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ নেই, তারাও ফিতরা গ্রহণের যোগ্য।
ফিতরা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা:
- একজন ব্যক্তিকে ফিতরা দেওয়া উত্তম, তবে একাধিক ব্যক্তিকে ভাগ করে দেওয়াও বৈধ।
- বহুজনের ফিতরা একজনকেও দেওয়া যায় যদি সে অতিরিক্ত প্রয়োজনমতো সম্পদহীন হয়।
- প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট, পুল নির্মাণ ইত্যাদি কাজে ফিতরা দেওয়া বৈধ নয়। ফিতরার অর্থ সরাসরি অভাবী ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।
ফিতরা মূলত ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার একটি মাধ্যম যাতে সবাই ঈদ উদযাপন করতে পারে।
ফিতরা দান প্রসঙ্গে মাসায়ালা
ফিতরা দান প্রসঙ্গে মাসায়ালা গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যা আমাদের প্রত্যেকেরই জানা উচিত। ফিতরা প্রসঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসায়ালা (বিধান) রয়েছে যা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জানা প্রয়োজন, বিশেষ করে যাদের যাকাত দেওয়ার সামর্থ্য নেই, কিন্তু ফিতরা আদায় করতে পারেন। ফিতরা হলো একটি ওয়াজিব দান, যা ঈদুল ফিতরের নামাযের আগে আদায় করা বাঞ্ছনীয়। এটি মূলত ঈদের আনন্দ সবার মধ্যে ভাগাভাগি করার জন্য এবং দরিদ্রদের ঈদের আনন্দে শরিক করতে সাহায্য করে।
নিচে ফিতরা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসায়ালা উল্লেখ করা হলো:
- ফিতরা আদায়ের সময়:
- ঈদের নামাজের আগেই ফিতরা আদায় করা উত্তম।
- তবে রমজান মাসের মধ্যে বা ঈদের নামাজের আগে ফিতরা আদায় করলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে।
- ফিতরার মূল উদ্দেশ্য:
- ফিতরার উদ্দেশ্য হলো দরিদ্রদের সহায়তা করা, যাতে তারা ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
- ফিতরা আদায়ের স্থান:
- ফিতরার টাকা মসজিদ, মাদ্রাসা, গৃহ নির্মাণ, রাস্তাঘাট সংস্কার ইত্যাদি কাজের জন্য ব্যয় করা যাবে না।
- এটি সরাসরি দরিদ্র এবং অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।
- গরিব ছাত্রদের ফিতরা:
- গরিব ছাত্রদের মধ্যে ফিতরা বিতরণ করা অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ।
- এতে দুই ধরনের সাওয়াব অর্জিত হয়: প্রথমত, গরিবদের সহায়তা করা এবং দ্বিতীয়ত, ইসলামি শিক্ষার প্রচার ও সংরক্ষণে অবদান রাখা।
- ফিতরা দেওয়ার পরিমাণ:
- সাধারণত খাদ্যশস্য (যেমন গম, চাল) বা এর অর্থমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা হয়। স্থানভেদে এর নির্দিষ্ট পরিমাণ হতে পারে, যা ইসলামি আইন বা স্থানীয় উলামা দ্বারা নির্ধারিত হয়।
এই বিধানগুলো মেনে চলা ফিতরা আদায়ের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ফিতরার উদ্দেশ্যই হলো দরিদ্রদের সহায়তা করা এবং তাদেরকে ঈদের আনন্দের অংশীদার করা।
জ্বিলকদ মাসের নফল রোজা
জ্বিলকদ মাসের নফল রোজা গুলো কোন কোন তারিখে তা জ্বিলকদ মাসের ক্যালেন্ডার ১৪৪৫ লক্ষ্য করলে বোঝা যায়। জ্বিলকদ মাসের নফল রোজার ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যা মুসলিমদের জন্য বিশেষ ইবাদতের সুযোগ হিসেবে গণ্য হয়। নবী কারীম (সা.) জ্বিলকদ মাসের রোজার গুরুত্ব এবং সাওয়াব সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। এই মাসে নফল রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে, এবং এর নির্দিষ্ট তারিখগুলো সম্পর্কে কিছু হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে।
জ্বিলকদ মাসের নফল রোজার ফজিলত:
- সাওয়াব: যে ব্যক্তি জ্বিলকদ মাসে যেকোনো একদিন রোজা রাখে, মহান আল্লাহ তাকে প্রতি ঘন্টায় একটি করে কবুল হজ্জের সাওয়াব দান করেন। এটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল হিসেবে গণ্য হয়।
- গোলাম আজাদ করার সাওয়াব: হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, জ্বিলকদ মাসে রোজা রাখার কারণে রোজাদার ব্যক্তির প্রতি নিঃশ্বাসে এক এক করে গোলাম আজাদ করার সাওয়াব হাসিল হয়।
- সোমবারের রোজার ফজিলত: নবী কারীম (সা.) বলেছেন, জ্বিলকদ মাসের সোমবার যে ব্যক্তি রোজা রাখবে, তাকে হাজার বছরের ইবাদতের থেকেও অধিক সাওয়াব দান করা হবে।
রোজার তারিখসমূহ:
জ্বিলকদ মাসের রোজাগুলো নির্দিষ্ট কোনো তারিখের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। তবে বিশেষ করে যেকোনো দিন বা সোমবার রোজা রাখা হলে অধিক সাওয়াবের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তাই এই মাসের যেকোনো দিন, বিশেষ করে সোম ও বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
মুসলমানরা এই মাসের নফল রোজাগুলো পালন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেন এবং অতিরিক্ত সাওয়াব অর্জন করতে পারেন।
তারাবীহ নামাযের তসবীহ
তারাবীহ নামাযের তসবীহ একটি বিশেষ জিকির বা তসবীহ যা তারাবীহ নামাযের সময় পাঠ করা হয়। এটি আল্লাহর মহিমা, শক্তি ও গৌরবের প্রশংসা এবং তার ক্ষমতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। তারাবীহ নামাযের তসবীহ সমূহ নিচে আলোচনা করা হলো:
তারাবীহ নামাযে পড়া তসবীহটি হলো:
سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِي لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوتُ أَبَدًا أَبَدًا سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّنَا وَرَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ
উচ্চারণ: সুবহানা যিলমুলকি ওয়াল মালাকুতি সুবহানা যিল ইজ্জাতি ওয়াল আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জব্বারুতি, সুবহানাল মালিকিল হাইয়িল্লাযী লা ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদান সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রুহ।
বাংলা অর্থ: “আমি মহিমা ঘোষণা করছি সেই সত্তার, যার কাছে রাজত্ব ও সমগ্র সৃষ্টির শক্তি আছে। আমি মহিমা ঘোষণা করছি সেই সত্তার, যার আছে ইজ্জত (মর্যাদা), আযমত (মহত্ত্ব), হাইবা (গাম্ভীর্য), কুদরত (ক্ষমতা), কিবরিয়া (মহানত্ব) এবং জব্বারুত (অতলান্ত শক্তি)। আমি মহিমা ঘোষণা করছি সেই চিরঞ্জীব বাদশাহর, যিনি কখনো ঘুমান না এবং কখনো মারা যাবেন না। তিনি মহা পবিত্র, মহা কুদ্দুস, আমাদের রব্ব এবং ফেরেশতাদের ও রুহের রব্ব।”
উচ্চারণ: সুবহানা যিলমুলকি ওয়াল মালাকুতি সুবহানা যিল ইজ্জাতি ওয়াল আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জব্বারুতি, সুবহানাল মালিকিল হাইয়িল্লাযী লা ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদান সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রুহ।
বাংলা অর্থ: “আমি মহিমা ঘোষণা করছি সেই সত্তার, যার কাছে রাজত্ব ও সমগ্র সৃষ্টির শক্তি আছে। আমি মহিমা ঘোষণা করছি সেই সত্তার, যার আছে ইজ্জত (মর্যাদা), আযমত (মহত্ত্ব), হাইবা (গাম্ভীর্য), কুদরত (ক্ষমতা), কিবরিয়া (মহানত্ব) এবং জব্বারুত (অতলান্ত শক্তি)। আমি মহিমা ঘোষণা করছি সেই চিরঞ্জীব বাদশাহর, যিনি কখনো ঘুমান না এবং কখনো মারা যাবেন না। তিনি মহা পবিত্র, মহা কুদ্দুস, আমাদের রব্ব এবং ফেরেশতাদের ও রুহের রব্ব।”
এই তসবীহ পাঠ করা আল্লাহর মহত্ত্ব ও তার ক্ষমতা স্মরণ করিয়ে দেয়, এবং ইবাদতের সময়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি উপায়।
তারাবীহ নামাযের বিবরণ
তারাবীহ নামাযের বিবরণ সমুহ সম্বন্ধে আমাদের অনেকেরই হয়তো জানা নাই। তারাবীহ নামায রমজান মাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ন একটি সুন্নত ইবাদত, যা প্রতিদিন এশার নামাযের পর আদায় করা হয়। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, অর্থাৎ নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন এবং উম্মতকে এটি আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তারাবীহ নামাযের বিবরণ:
- রাকাত সংখ্যা: তারাবীহ নামায ২০ রাকাত, যা রমজানের প্রতি রাতে আদায় করা হয়। স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ই এটি আদায় করবেন। পুরুষদের জন্য মসজিদে জামায়াতে আদায় করা উত্তম, তবে নারীরা ঘরে নামায পড়লেও সাওয়াব পাবেন।
- ফজিলত: তারাবীহ নামায অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। হাদীস শরীফে এসেছে যে, "যে ব্যক্তি রমজান মাসে ইমান ও আশায় (আল্লাহর সাওয়াবের আশা নিয়ে) তারাবীহ নামায আদায় করে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।"
- কুরআন খতম: তারাবীহ নামাযের সময় পুরো কুরআন শরীফ একবার খতম করা সুন্নত। ইমাম যদি হাফেজ না হন, তবে তিনি সূরা ফিল থেকে নিচের সূরাগুলো পড়তে পারেন, যা সহজ ও সুন্নাত সম্মত।
- জামাতের ফজিলত: জামাতে তারাবীহ নামায আদায় করলে অধিক সাওয়াব পাওয়া যায়। যদিও একা পড়লেও নামায আদায় হবে, তবে জামাতে নামায আদায়ের তুলনায় সাওয়াব কম হবে।
- নারীদের জন্য বিধান: নারীরা ঘরে একা বা পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে তারাবীহ নামায আদায় করতে পারেন। তবে তাদের জন্য মসজিদে যাওয়া আবশ্যক নয়।
তারাবীহ নামাযের উদ্দেশ্য:
তারাবীহ নামায আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং রমজানের বরকতপূর্ণ সময়ের পূর্ণ ব্যবহার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এটি রাতে দীর্ঘ সময় ধরে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকার সুযোগ দেয় এবং কুরআন শরীফ তেলাওয়াতের মাধ্যমে মনকে পবিত্র করে।
সংক্ষেপে:
- রাকাত সংখ্যা: ২০ রাকাত।
- আদায়ের সময়: এশার ফরজ এবং সুন্নাতের পরে, বেতরের পূর্বে।
- ফজিলত: পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ, আল্লাহর নৈকট্য লাভ।
- জামাতে আদায়ের গুরুত্ব: অধিক সাওয়াব।
রমজানের তারাবীহ নামায রমজানের বিশেষ ইবাদতের অংশ এবং এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে মহান দান হিসেবে বিবেচিত।
তারাবীহ নামাযের নিয়ত
তারাবীহ নামাযের নিয়ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নামাযের সঠিকতা নিশ্চিত করতে নিয়ত সহিহভাবে করতে হয়। তারাবীহ নামায সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, অর্থাৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত, যা রমজান মাসে এশার নামাযের পর বেতরের পূর্বে আদায় করা হয়। তারাবীহ নামাযের নিয়ত সমূহ নিচে আলোচনা উল্লেখ করা হলো:
তারাবীহ নামাযের নিয়ত নিম্নরূপ:
আরবি: نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَيْنِ صَلَاةَ التَّرَاوِيْحِ سُنَّةَ رَسُوْلِ اللّٰهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللّٰهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকাআতাই সালাতিত তারাবীহ সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলা অর্থ: “আমি নিয়ত করলাম দুই রাকাত তারাবীহ নামায পড়ব আল্লাহর উদ্দেশ্যে, সুন্নাত হিসাবে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নত অনুসরণ করে, কাবা শরীফের দিকে মুখ করে। আল্লাহু আকবার।”
প্রতিটি দুই রাকাতের জন্য এই নিয়ত করা হয়। তারাবীহ নামায ২০ রাকাত হয়ে থাকে, তাই প্রতি দুই রাকাত শেষে এই নিয়ত পুনরায় করা যেতে পারে।
নিয়তের গুরুত্ব:
নামাযে নিয়ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নিয়ত ছাড়া নামায শুদ্ধ হয় না। নিয়ত অন্তরের ইচ্ছা এবং মুখে উচ্চারণ দ্বারা হয়, তবে মুখে বলা না হলেও শুধুমাত্র অন্তরের ইচ্ছা যথেষ্ট।
সদকায়ে ফিতরার বিবরণ
সদকায়ে ফিতরা বা ফিতরা ঈদুল ফিতরের দিন একটি ওয়াজিব দান, যা রমজানের শেষে ঈদের নামাযের পূর্বে আদায় করা হয়। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান এবং সাহেবে নেসাব বা নির্দিষ্ট সম্পদশালী ব্যক্তিদের ওপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। এর মূল উদ্দেশ্য হল দরিদ্রদের সাহায্য করা, যাতে তারা ঈদের দিন আনন্দের সঙ্গে কাটাতে পারে এবং তাদেরও প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ হয়।
সদকায়ে ফিতরার বিবরণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ঈদের আনন্দে সকলকে শামিল করা: ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র মানুষদেরও ঈদের আনন্দে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়। এটি সামাজিক দায়িত্ববোধের একটি অংশ।
- রোজার ত্রুটির সংশোধন: ফিতরা রমজানের রোজা রাখার সময় কোনো ধরনের ছোটখাটো ভুল বা ত্রুটি হয়ে থাকলে তা প্রায়শ্চিত করার জন্য একটি মাধ্যম। হাদীসে বর্ণিত আছে, "ফিতরা রোজাদারকে তার রোজার ত্রুটির কারণে শুদ্ধ করার জন্য এবং দরিদ্রদের খাদ্য হিসাবে আদায় করা হয়।"
- অন্যদের সহায়তা: ফিতরার দান গরীব, মিসকিন এবং যারা প্রয়োজনের মধ্যে রয়েছেন, তাদেরকে সহায়তা করা হয়। এটি সমাজের দারিদ্র্য দূরীকরণের একটি মাধ্যম।
সদকায়ে ফিতরার বিধান:
- ফিতরা আদায় করা সাহেবে নেসাব বা যাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তাদের জন্য ওয়াজিব।
- ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় খাদ্যশস্য বা এর সমমূল্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্বারা। সাধারণত গম, খেজুর, আঙ্গুর, বা যবের পরিমাণ অনুযায়ী ফিতরা আদায় করা হয়।
- ফিতরা ঈদের নামাযের পূর্বেই আদায় করতে হয়, যাতে দরিদ্ররা ঈদের দিনটি আনন্দের সঙ্গে কাটাতে পারে।
ফিতরা আদায়ের পরিমাণ:
ফিতরার পরিমাণ এক ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত খাদ্যশস্য বা এর মূল্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ। এটি স্থান ও সময়ের ওপর নির্ভর করে আলেমদের দ্বারা নির্ধারিত হয়।
ফিতরা আদায়ের উপযুক্ত সময়:
ফিতরা আদায় করার সবচেয়ে উত্তম সময় হল ঈদের নামাযের পূর্বে। তবে রমজানের শেষ দিকে বা ঈদের আগের দিনও আদায় করা যেতে পারে।
ফিতরা হল সমাজের দরিদ্রদের প্রতি সাহায্য ও সমর্থনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী বিধান, যা রমজান শেষে তাদের জীবনে স্বস্তি এবং সুখ এনে দেয়।
জ্বিলকদ মাসের ইবাদত
জ্বিলকদ মাসের ইবাদত ও ফজিলত সম্বন্ধে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা জ্বিলকদকে সম্মানিত মাস মনে করবে। কেননা জ্বিলকদ মাস ইসলামে অত্যন্ত সম্মানিত একটি মাস। এই মাসকে "আশহুরুল হুরুম" বা সম্মানিত মাস হিসেবে গণ্য করা হয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্বিলকদ মাসের ইবাদত ও ফজিলত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন, যা মুসলমানদের জন্য এই মাসে বিশেষ ইবাদত করতে উৎসাহিত করে।
জ্বিলকদ মাসের ফজিলত:
- সম্মানিত মাস: নবী কারীম (সাঃ) জ্বিলকদ মাসকে বিশেষভাবে সম্মানিত মাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই মাসে ইবাদত করা এবং গুনাহ থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- হাজার বছরের ইবাদতের সমান সাওয়াব: হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, জ্বিলকদ মাসে একদিন রোজা রাখা বা একটি ইবাদত করা হাজার বছরের ইবাদতের সমান সাওয়াব অর্জনের মাধ্যম হতে পারে।
- নফল নামাযের ফজিলত:
- বৃহস্পতিবারের নফল নামায: যারা এই মাসের বৃহস্পতিবারে ১০০ রাকাত নফল নামায আদায় করবে এবং প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে ১০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে, তাদের জন্য মহান আল্লাহ অফুরন্ত সাওয়াব দান করবেন।
- শুক্রবারের বিশেষ নফল নামায: যারা জ্বিলকদ মাসের শুক্রবারে ৪ রাকাত নফল নামায আদায় করবে, তাদের জন্য হজ্জ এবং ওমরার সাওয়াব প্রদান করা হবে। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে ১০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করতে হবে।
- প্রথম রাতের নফল নামায: জ্বিলকদ মাসের প্রথম রাতে ৪ রাকাত নফল নামায আদায় করলে বেহেশতের মধ্যে বিশেষ প্রাসাদ (বালাখানা) নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এর প্রতি রাকাতে ২৩ বার সূরা ইখলাস পাঠ করতে হবে।
- প্রতিদিনের ইবাদতের ফজিলত: জ্বিলকদ মাসে প্রতিরাতে ২ রাকাত নফল নামায আদায় করলে, প্রতিটি রাকাতের জন্য একজন শহীদের সমান সাওয়াব প্রদান করা হবে।
ইবাদতের নিয়মাবলী:
- নফল নামাযের নিয়ত: নফল নামাযের জন্য নিয়ত করতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে। দুই দুই রাকাত করে এই নামাযগুলো আদায় করতে হবে।
- নামাযের সূরা পাঠ: প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে নির্দিষ্ট সংখ্যক বার সূরা ইখলাস পাঠ করতে হবে।
জ্বিলকদ মাসের ইবাদতসমূহ মুসলমানদের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে অফুরন্ত সাওয়াব অর্জনের সুযোগ এনে দেয়।
রোজার কাফফারা সমূহ
রোজার কাফফারা সমূহের সঠিক নিয়ম ও এর গুরুত্বতা সম্বন্ধে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা আমাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য। রোজার কাফফারা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন কোন কারণে রোজার সঠিক পালন সম্ভব না হয়। কাফফারা মূলত একটি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা যা রোজার নিয়ম বা বিধি ভঙ্গের জন্য নির্ধারিত হয়।
কাফফারা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ:
- কাফফারার প্রকৃতি:
- রোজা ভঙ্গের জন্য কাফফারা প্রদান করা হয় যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করে বা তাদের রোজার কিছু শর্ত মেনে না চলে।
- এটি মূলত এক প্রকারের শাস্তি যা রোজার নিয়ম মেনে চলতে সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়।
কাফফারা আদায়ের নিয়ম:
১. একাধিক কাফফারার বিধি:
- মুক্তি প্রদান: একজন সুস্থ ও পূর্ণাঙ্গ গোলামকে মুক্ত করার মাধ্যমে কাফফারা আদায় করা হয়। তবে এটি আজকের সময়ে বাস্তবসম্মত নয়, তাই অন্যান্য বিকল্প উপায় অনুসরণ করতে হয়।
- মিসকিনদের আহার: যদি গোলাম মুক্ত করার ক্ষমতা না থাকে, তবে ৬০ জন মিসকিনকে পূর্ণ আহার করানো হবে।
- নিজে আহার করানো: যদি মিসকিনদের আহার করানোর ক্ষমতা না থাকে, তাহলে ৬০ দিন ধরে এক মুসলিমকে নিজে যেভাবে আহার করে, সেভাবেই আহার করানো হবে।
- লাগাতার রোজা: যদি উক্ত উপায়গুলি গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে দুই মাস লাগাতার রোজা রাখা হবে।
২. বিশেষ শর্তাবলী:
- হারামের দিনগুলি: কাফফারা প্রদান করার সময় উচিত বছরের হারামের ৫ দিন (ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা ও তাশরিক দিন) অতিক্রম না করা।
- হায়েযকালীন রোজা: মহিলা যদি হায়েয বা নেফাসের কারণে রোজা রাখতে না পারেন, তবে তাদের পবিত্র হওয়ার পর কাফফারা রোজা শুরু করতে হবে।
৩.বিচারযোগ্য বিষয়:
- বিচ্ছিন্ন রোজা: যদি দুই মাসের রোজার মধ্যে কোনো দিন ছুটে যায়, তবে শুরু থেকে ৬০ দিন পুনরায় পালন করতে হবে।
- পূর্ববর্তী দিনগুলোর রোজা: পূর্বের দিনগুলোর রোজা কাফফারার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
কাফফারার গুরুত্ব:
- ইসলামিক বিধি মেনে চলা: কাফফারা মুসলমানদেরকে ইসলামী বিধি মেনে চলার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে এবং ভুল বা লঙ্ঘনের জন্য একটি সুষ্ঠু প্রতিকার প্রদান করে।
- সামাজিক সহায়তা: মিসকিনদের আহার করানো বা তাদেরকে সহায়তা প্রদান সামাজিক ন্যায় ও সচ্ছলতার উপর গুরুত্ব দেয়।
- আধ্যাত্মিক পরিশোধ: কাফফারা আধ্যাত্মিক পরিশোধের অংশ হিসেবে কাজ করে, যা আল্লাহর কাছে পরিত্রাণের পথ হিসেবে বিবেচিত হয়।
রোজার কাফফারা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা এবং তা যথাযথভাবে পালন করা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চাঁদ দেখলে মাসায়ালা
চাঁদ দেখা নিয়ে রোজা রাখার বিধি-ব্যবস্থা ইসলামিক শরিয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি মুসলিমদের জন্য রোজা রাখা বা ঈদ উদযাপন করার সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। চাঁদ দেখলে মাসায়ালা সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো:
চাঁদ দেখার মাসায়েলা:
- চাঁদ দেখা না গেলে:
- মেঘলা আকাশ: যদি আকাশে বেশি মেঘ থাকে এবং চাঁদ দেখা না যায়, তবে একজন পরহেজগার মুসলমানের কাছে চাঁদ দেখার সাক্ষ্য পাওয়া গেলে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক।
- চাঁদ দেখার সাক্ষ্য:
- মেঘমুক্ত আকাশ: আকাশে মেঘ না থাকলে, অন্তত পাঁচজন মুসলমানের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য পাওয়া গেলে রোজা রাখা উচিত। এটি একটি নিশ্চিতকরণের প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়।
- ঈদ ঘোষণার সাক্ষ্য:
- ঈদের দিন: রোজা ভেঙে ঈদ করার ক্ষেত্রে, কমপক্ষে দুইজন মুমিন পুরুষের সাক্ষ্য প্রমাণ প্রয়োজন।
- মহিলাদের সাক্ষ্য: যদি দুইজন মুমিন পুরুষের সাক্ষ্য না পাওয়া যায়, তবে একজন মুমিন পুরুষ ও দুইজন মুমিন মহিলার সাক্ষ্যও গ্রহণযোগ্য। তবে, পুরুষ সাক্ষী না পাওয়া গেলে, মহিলাদের সাক্ষ্য যথেষ্ট হবে না।
অন্যান্য বিবেচ্য বিষয়:
- পুরুষ সাক্ষী: যদি একাধিক মহিলার সাক্ষ্য থাকে কিন্তু পুরুষ সাক্ষী না পাওয়া যায়, তাহলে সেই সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না।
- ঈদের দিন: ঈদ উদযাপনের ক্ষেত্রে এ নিয়মগুলি অপরিহার্য, যাতে নির্ভুলভাবে মাসের সমাপ্তি ও নতুন মাসের শুরু নিশ্চিত করা যায়।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- বিশ্বাসযোগ্যতা: সাক্ষী দেওয়ার ক্ষেত্রে মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সততা গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষী ব্যক্তির পরহেজগারি ও সততা যাচাই করা উচিত।
- শরিয়ত সম্মত: এসব নিয়ম ইসলামী শরিয়তের নিয়মাবলীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই প্রতিটি মুসলমানকে এসব নিয়ম মেনে চলা উচিত।
এই মাসায়েলগুলি মেনে চলা রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপন করার ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হয় এবং ইসলামিক বিধি অনুসারে কার্যকরী উপায় প্রদান করে।
ফিতরা দিবে কারা
ফিতরা প্রদান সম্পর্কিত মাসায়েলা বা নিয়মাবলী জানা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের দিন। ফিতরা দিবে কারা বা কোন ধরনের মানুষ ফিতরা দিবে এ সম্বন্ধে নিচে উল্লেখ করা হলো:
ফিতরা প্রদানের নিয়মাবলী:
- নিজের পক্ষ থেকে ফিতরা প্রদান:
- একজন ব্যক্তি তার নিজের পক্ষ থেকে ফিতরা প্রদান করবে। এটি নিজের জন্য ও নিজের পরিবারে উপস্থিত সকল সদস্যের জন্য প্রযোজ্য।
- দরিদ্র নাবালেক সন্তানের পক্ষ থেকে:
- যদি একজনের কাছে নাবালেক সন্তানেরা থাকে, তবে তাদের পক্ষ থেকেও ফিতরা প্রদান করতে হবে। বাড়ির কর্তাকে এই ফিতরা আদায় করতে হবে।
- ঈদের দিন সন্তানের জন্ম:
- ঈদের দিন ফজরের নামাযের পূর্বে যদি কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করে, তার পক্ষ থেকেও ফিতরা প্রদান করতে হবে।
- তবে, যদি ঈদের দিন কেউ মারা যায়, তার পক্ষ থেকে ফিতরা প্রদান করার প্রয়োজন নেই।
- ঈদের দিন সন্তানের মৃত্যু:
- ঈদের দিন সূর্যাস্তের পর যদি কেউ জন্মগ্রহণ করে, তার পক্ষ থেকে ফিতরা প্রদান করতে হবে না।
- একইভাবে, যদি কেউ ঈদের দিন সূর্যাস্তের পর মারা যায়, তার পক্ষ থেকে ফিতরা প্রদান করতে হবে।
- সন্তান-সন্ততি বা স্ত্রীর ফিতরা:
- যদি সন্তান-সন্ততি বা স্ত্রী পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হন এবং তাদের নিজের নিবাস হয়, তবে তাদের ফিতরা তারা নিজেই আদায় করবে। কিন্তু পরিবারের প্রধান ব্যক্তি তাদের ফিতরা প্রদান করাও উচিত এবং প্রয়োজন হলে প্রদান করতে হবে।
এই নিয়মাবলী অনুসরণ করে ফিতরা প্রদান করা হলে, এটি ইসলামী বিধি অনুযায়ী সঠিকভাবে আদায় হবে।
শেষ কথা
উপরোক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল জ্বিলকদ মাসের ক্যালেন্ডার ১৪৪৫ সম্বন্ধে। সাথে ফিতরা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য ও নফল রোজার সমস্ত বিধি নিয়ম সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আজকের আর্টিকেলে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনার অনেক ভালো লেগেছে।
আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কোন কোন বিষয়গুলি ভালো লেগেছে এবং আপনি কতটুকু উপকৃত হয়েছেন আপনার মূল্যবান মতামত আপনার নিকটস্থ বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। এমনই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয় আর্টিকেল প্রতিদিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Comments
Post a Comment