স্মার্ট টিভি কেনার আগে কি কি করণীয়? অবশ্যই আমাদের এ বিষয়গুলো জেনে রাখা উচিত। কারণ আমাদের সবার বাড়িতেই টিভি রয়েছে। এখন আপনি যদি স্মার্ট টিভি কিনতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই কিছু বিষয় জেনে রাখা উচিত।
আপনি যদি স্মার্ট টিভি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে স্মার্ট টিভি কেনার আগে কি কি করণীয়? বিস্তারিতভাবে জেনে নিন এর পরে স্মার্ট টিভি কিনতে যাবেন। আশা করি ভালো মানের একটি টিভি কিনে আনতে পারবেন।
স্মার্ট টিভি কেনার আগে কি কি করণীয়
স্মার্ট টিভি কেনার আগে কি কি করণীয় এ বিষয়গুলো জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে, যেখানে টিভি শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি একটি মাল্টিমিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আপনি যদি স্মার্ট টিভি সম্পর্কে ধারণা না রাখেন এবং একটি কিনতে চান, তাহলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নিচে সেই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:
১. টিভির সাইজ
রুমের আকার অনুযায়ী টিভির সাইজ ঠিক করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি রুম ছোট হয় এবং আপনি বড় টিভি নিয়ে আসেন, তাহলে সেটি দেখতে খারাপ লাগবে এবং চোখের উপরও চাপ পড়তে পারে। সাধারণত, রুমের আকারের তুলনায় সঠিক আকারের টিভি কিনলে সেটি রুমের সাথে মানানসই হয় এবং দেখতেও সুন্দর লাগে।
২. বাজেট নির্ধারণ
বাজেট অনুযায়ী টিভির মডেল এবং ব্র্যান্ড নির্বাচন করা উচিত। টিভির দাম এবং ফিচারের মধ্যে সম্পর্ক থাকে, তাই আপনার বাজেটের মধ্যে সেরা টিভি খুঁজে নিন। বেশি ফিচারস সহ টিভি কিনতে চাইলে বাজেট একটু বেশি রাখতে হতে পারে।
৩. রেজুলেশন
ছবি এবং ভিডিও দেখার মান রেজুলেশনের উপর নির্ভর করে। বেশি রেজুলেশন মানে পিক্সেল বেশি, ফলে ছবি আরও স্পষ্ট এবং সুন্দর দেখা যায়। Full HD (1080p), 4K, এবং 8K রেজুলেশনের টিভি বাজারে পাওয়া যায়, যেখান থেকে আপনার পছন্দমতো নির্বাচন করতে পারেন।
৪. ডাইনামিক রেঞ্জ (HDR)
HDR (High Dynamic Range) টিভির কালার এবং ব্রাইটনেস উন্নত করে, ফলে ভিডিওগুলো আরও বাস্তবমুখী দেখা যায়। তাই এই ফিচারটি থাকা টিভি বেছে নিন, তবে অত্যধিক হাই ডাইনামিক রেঞ্জের প্রয়োজন নেই।
৫. ডিসপ্লে প্রযুক্তি
ডিসপ্লের মান আপনার টিভি দেখার অভিজ্ঞতা নির্ধারণ করে। LED এবং LCD ডিসপ্লে সাধারণত বেশি পাওয়া যায় এবং এগুলো তুলনামূলক সাশ্রয়ী। তবে OLED এবং QLED ডিসপ্লেগুলি উচ্চমানের কালার এবং কনট্রাস্ট প্রদান করে।
৬. কানেক্টিভিটি
HDMI, USB, এবং অন্যান্য পোর্টগুলোর সুবিধা দেখুন। এই পোর্টগুলো বিভিন্ন ডিভাইস সংযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেমন গেমিং কনসোল, ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন। এছাড়া Wi-Fi এবং Bluetooth কানেক্টিভিটি থাকলে সুবিধা বাড়বে।
৭. অডিও কোয়ালিটি
ভালো ভিডিও কোয়ালিটির পাশাপাশি, অডিও কোয়ালিটিও গুরুত্বপূর্ণ। বিল্ট-ইন স্পিকার ভালো হলে টিভি দেখার অভিজ্ঞতা আরও উন্নত হয়। যদি প্রয়োজন মনে করেন, এক্সটার্নাল স্পিকার বা সাউন্ডবার সংযোগেরও ব্যবস্থা থাকতে পারে।
৮. ব্র্যান্ড সিলেকশন
বাংলাদেশে Samsung, Sony, LG, Walton, Xiaomi ইত্যাদি ব্র্যান্ডের স্মার্ট টিভি পাওয়া যায়। ভালো মানের এবং নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের টিভি বেছে নিন, কারণ সেগুলোর পরিসেবা এবং ওয়ারেন্টি সুবিধা সাধারণত উন্নত হয়।
৯. ওয়ারেন্টি এবং গ্যারান্টি
টিভির ওয়ারেন্টি এবং বিক্রয় পরবর্তী সেবা সম্পর্কে জেনে নিন। সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়। এটি টিভি ব্যবহারের সময় যে কোন সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে।
এই বিষয়গুলো মনে রেখে টিভি কেনার সিদ্ধান্ত নিলে, আপনি নিশ্চিতভাবে আপনার রুমের জন্য সেরা মানের স্মার্ট টিভি কিনতে সক্ষম হবেন।
স্মার্ট টিভিতে কি কি করা যায়
স্মার্ট টিভিতে কি কি করা যায়? আমরা অনেকেই জানিনা। স্মার্ট টিভি আপনাকে অনেক ধরনের কার্যক্রম করার সুযোগ দেয়। কিছু মূল সুবিধা:
- স্ট্রিমিং: Netflix, Amazon Prime, Disney+, YouTube ইত্যাদি স্ট্রিমিং সেবা ব্যবহার করে ভিডিও কনটেন্ট দেখতে পারবেন।
- ইন্টারনেট ব্রাউজিং: টিভির ব্রাউজার দিয়ে ইন্টারনেট সার্ফিং করতে পারবেন।
- অ্যাপস এবং গেমস: বিভিন্ন অ্যাপস ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন, যেমন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপস, সংবাদ অ্যাপস, এবং গেমস।
- মিউজিক স্ট্রিমিং: Spotify, Apple Music, বা অন্যান্য মিউজিক স্ট্রিমিং অ্যাপস ব্যবহার করে গান শুনতে পারবেন।
- ভিডিও কলিং: কিছু স্মার্ট টিভিতে স্কাইপ বা অন্যান্য ভিডিও কলিং অ্যাপস ব্যবহার করে পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে ভিডিও কল করতে পারবেন।
- স্মার্ট হোম কন্ট্রোল: যদি আপনার স্মার্ট হোম ডিভাইস থাকে, তাহলে স্মার্ট টিভি দিয়ে সেই ডিভাইসগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
- ফাইল শেয়ারিং: ফোন বা কম্পিউটার থেকে টিভিতে ফাইল বা মিডিয়া শেয়ার করতে পারবেন।
- ওয়েব টিভি: লাইভ টিভি চ্যানেল স্ট্রিমিং করতে পারবেন কিছু টিভি অ্যাপস বা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে।
- কাস্টিং: আপনার স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের কনটেন্ট টিভিতে কাস্ট করতে পারবেন।
- পার্সোনালাইজড কনটেন্ট: আপনার আগ্রহ অনুযায়ী কনটেন্ট সাজিয়ে দেখতে পারবেন, যেমন আপনার পছন্দের শো বা সিনেমা সাজিয়ে রাখা।
স্মার্ট টিভি এবং এন্ড্রয়েড টিভির মধ্যে পার্থক্য
স্মার্ট টিভি ও এন্ড্রয়েড টিভির মধ্যে পার্থক্য আছে। যা আমাদের মধ্যে অনেকেই এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজানা। স্মার্ট টিভি এবং এন্ড্রয়েড টিভির মধ্যে পার্থক্যগুলি মূলত তাদের অপারেটিং সিস্টেম এবং ফিচারের ওপর নির্ভর করে। এখানে কিছু মূল পার্থক্য তুলে ধরা হলো:
১. অপারেটিং সিস্টেম:
- স্মার্ট টিভি: সাধারণভাবে স্মার্ট টিভি বলতে এমন টিভি বোঝানো হয় যা ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি এবং অ্যাপস চালানোর ক্ষমতা রাখে। তবে, স্মার্ট টিভির অপারেটিং সিস্টেম বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দ্বারা তৈরি হতে পারে, যেমন LG এর WebOS, Samsung এর Tizen, বা অন্যান্য ব্র্যান্ডের নিজস্ব সিস্টেম।
- এন্ড্রয়েড টিভি: এটি Google এর Android অপারেটিং সিস্টেম ভিত্তিক। এন্ড্রয়েড টিভিতে Google Play Store ব্যবহার করে অ্যাপস ডাউনলোড এবং ইনস্টল করা যায়। এতে Google Assistant এবং Google Cast (Chromecast) সাপোর্ট করা থাকে।
২. অ্যাপস এবং গেমস:
- স্মার্ট টিভি: যে স্মার্ট টিভির অপারেটিং সিস্টেম অন্য ব্র্যান্ডের তৈরি, সেখানে Google Play Store এর সব অ্যাপস পাওয়া নাও যেতে পারে। তবে, বেশিরভাগ জনপ্রিয় স্ট্রিমিং অ্যাপস সাধারণত পাওয়া যায়।
- এন্ড্রয়েড টিভি: Google Play Store থেকে হাজার হাজার অ্যাপস এবং গেমস ডাউনলোড করা যায়। অ্যাপসের বৈচিত্র্য এবং আপডেটস বেশি থাকে।
৩. ভয়েস কন্ট্রোল:
- স্মার্ট টিভি: কিছু স্মার্ট টিভিতে নিজস্ব ভয়েস কন্ট্রোল থাকতে পারে, কিন্তু তা Google Assistant বা Alexa এর মত পূর্ণাঙ্গ নয়।
- এন্ড্রয়েড টিভি: Google Assistant ইন-বিল্ট থাকে, তাই আপনি ভয়েস কমান্ড ব্যবহার করে টিভি কন্ট্রোল করতে পারবেন এবং প্রশ্ন করতে পারবেন।
৪. আপডেটস এবং ইন্টিগ্রেশন:
- স্মার্ট টিভি: অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড দ্বারা আপডেট করা হয় এবং সেই ব্র্যান্ডের অন্যান্য ডিভাইসের সাথে সীমিত ইন্টিগ্রেশন থাকতে পারে।
- এন্ড্রয়েড টিভি: Google নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট প্রদান করে এবং এটি Google এর অন্যান্য পরিষেবার সাথে সহজে ইন্টিগ্রেট হয়।
৫. কাস্টিং এবং শেয়ারিং:
- স্মার্ট টিভি: কাস্টিং ফিচার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টিভিতে বিভিন্ন রকমের হতে পারে।
- এন্ড্রয়েড টিভি: Google Cast (Chromecast) ইন্টিগ্রেটেড থাকে, যা দিয়ে সহজেই আপনার স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের কনটেন্ট টিভিতে কাস্ট করতে পারবেন।
স্মার্ট টিভি ও সাধারণ টিভির মধ্যে পার্থক্য
স্মার্ট টিভি কেনার আগে কি কি করণীয়? সাধারণত এ বিষয়ে সম্পর্কে জেনেছি এখন আমরা স্মার্ট টিভি ও সাধারণ টিভির মধ্যে কি পার্থক্য আছে এ বিষয়গুলো জানব। স্মার্ট টিভি এবং সাধারণ টিভির মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, যা স্মার্ট টিভিকে আরও আধুনিক এবং বহুমুখী করে তুলেছে। নিচে স্মার্ট টিভি ও সাধারণ টিভির মধ্যে পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো:
১. ইন্টারনেট সংযোগ
- স্মার্ট টিভি: ইন্টারনেট সংযোগের সুবিধা রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি ব্রাউজিং, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, ফেসবুক, এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবেন।
- সাধারণ টিভি: এখানে ইন্টারনেট সংযোগের কোনো ব্যবস্থা নেই। আপনি শুধুমাত্র টিভি চ্যানেল দেখতে পারবেন, যা সাধারণত ডিস বা কেবল সংযোগের মাধ্যমে আসে।
২. অপারেটিং সিস্টেম
- স্মার্ট টিভি: স্মার্ট টিভিতে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম থাকে (যেমন Android, Tizen, WebOS), যা দিয়ে বিভিন্ন অ্যাপ ইনস্টল করা যায় এবং মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট অ্যাক্সেস করা সম্ভব।
- সাধারণ টিভি: সাধারণ টিভিতে কোনো অপারেটিং সিস্টেম নেই, তাই এখানে অ্যাপ ইনস্টল করা বা ইন্টারনেট ব্রাউজ করা সম্ভব নয়।
৩. অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা
- স্মার্ট টিভি: বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়, যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, স্পোটিফাই ইত্যাদি।
- সাধারণ টিভি: সাধারণ টিভিতে অ্যাপ ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই।
৪. কানেক্টিভিটি অপশন
- স্মার্ট টিভি: Wi-Fi, Bluetooth, HDMI, USB পোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিভাইস সংযোগ করার সুযোগ থাকে। আপনি সহজেই স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল সংযোগ করতে পারেন।
- সাধারণ টিভি: সাধারণত HDMI এবং USB পোর্ট থাকে, কিন্তু ইন্টারনেট কানেকশন বা ব্লুটুথ সংযোগের সুবিধা নেই।
৫. স্ট্রিমিং সার্ভিস
- স্মার্ট টিভি: স্মার্ট টিভিতে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, ডিজনি প্লাসের মতো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম সরাসরি অ্যাক্সেস করা যায়।
- সাধারণ টিভি: এখানে স্ট্রিমিং সার্ভিস অ্যাক্সেস করার কোনো ব্যবস্থা নেই। আপনি কেবল ডিসের মাধ্যমে টিভি চ্যানেল দেখতে পারেন।
৬. কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণের স্বাধীনতা
- স্মার্ট টিভি: আপনি নিজের পছন্দ মতো যেকোনো সময় ভিডিও, মুভি, গান বা গেম খেলতে পারবেন।
- সাধারণ টিভি: কেবলমাত্র যে চ্যানেলগুলোতে প্রোগ্রাম চলছে, সেগুলো দেখতে পারবেন। নিজের পছন্দ অনুযায়ী কন্টেন্ট দেখা সম্ভব নয়।
৭. রিমোট কন্ট্রোল
- স্মার্ট টিভি: স্মার্ট টিভিতে আধুনিক রিমোট কন্ট্রোল থাকে, যাতে ভয়েস কমান্ড এবং টাচপ্যাডের সুবিধা থাকে। স্মার্টফোন দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- সাধারণ টিভি: সাধারণ রিমোট কন্ট্রোল থাকে, যেখানে খুবই সীমিত কার্যকারিতা থাকে।
৮. গেমিং এবং মাল্টিমিডিয়া
- স্মার্ট টিভি: অনলাইন গেমিং এবং বিভিন্ন মাল্টিমিডিয়া ফিচারস ব্যবহার করা সম্ভব।
- সাধারণ টিভি: গেমিং বা মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের সুযোগ নেই।
৯. মূল্য
- স্মার্ট টিভি: সাধারণত স্মার্ট টিভির দাম বেশি হয়, কারণ এতে অনেক আধুনিক ফিচার থাকে।
- সাধারণ টিভি: সাধারণ টিভির দাম তুলনামূলকভাবে কম।
উপসংহার:
স্মার্ট টিভি সাধারণ টিভির তুলনায় আরও উন্নত এবং বহুমুখী ফিচারস সরবরাহ করে, যা আধুনিক জীবনে আরও উপযোগী। ইন্টারনেট অ্যাক্সেস, মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের স্বাধীনতা, এবং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সুবিধার জন্য স্মার্ট টিভি বেশিরভাগ মানুষের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠছে।
স্মার্ট টিভি চালানোর নিয়ম
স্মার্ট টিভি চালানোর নিয়ম সম্পর্কে এখন জানবো। আপনি যদি স্মার্ট টিভি ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই এ বিষয় গুলো জেনে রাখতে হবে। স্মার্ট টিভি চালানোর জন্য সাধারণ পদক্ষেপগুলি নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. সংযোগ স্থাপন:
- বিদ্যুৎ সংযোগ: টিভি চালু করার আগে অবশ্যই বিদ্যুৎ সংযোগ দিন। প্লাগটি সঠিকভাবে পওয়ার আউটলেটে সংযুক্ত করুন।
- অ্যান্টেনা বা কেবল সংযোগ: যদি আপনার কেবল টিভি বা অ্যান্টেনা থাকে, তবে সেটি টিভির উপযুক্ত পোর্টে সংযুক্ত করুন।
- ইন্টারনেট সংযোগ: ওয়াই-ফাই বা ইথারনেট ক্যাবল ব্যবহার করে টিভির ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করুন।
২. টিভি চালু করা:
- পাওয়ার বাটন: টিভির পাওয়ার বাটন চাপুন বা রিমোট কন্ট্রোল থেকে পাওয়ার বাটন চাপুন। কিছু টিভির পাওয়ার বাটন সাইড বা পিছনে থাকতে পারে।
৩. প্রাথমিক সেটআপ:
- ভাষা নির্বাচন: প্রথমবার চালু করার সময়, টিভির ভাষা নির্বাচন করতে বলা হতে পারে।
- ইন্টারনেট কনফিগারেশন: ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক সিলেক্ট করুন এবং সঠিক পাসওয়ার্ড দিয়ে সংযোগ করুন।
- চ্যানেল স্ক্যান: অ্যান্টেনা বা কেবল সংযুক্ত থাকলে, টিভির চ্যানেল স্ক্যান করুন।
৪. অ্যাপস সেটআপ:
- অ্যাপ স্টোরে প্রবেশ: স্মার্ট টিভির অপারেটিং সিস্টেমের অ্যাপ স্টোরে যান (যেমন Google Play Store, LG Content Store, Samsung Apps)।
- অ্যাপস ডাউনলোড: স্ট্রিমিং সার্ভিস (যেমন Netflix, Amazon Prime) এবং অন্যান্য অ্যাপস ডাউনলোড করুন এবং ইনস্টল করুন।
৫. লগইন এবং কনফিগারেশন:
- অ্যাপ লগইন: আপনার অ্যাপগুলিতে লগইন করুন (যেমন Netflix এ আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করুন)।
- সেটিংস কনফিগার করুন: টিভির সেটিংস মেনুতে গিয়ে পছন্দসই কনফিগারেশন করুন (পর্দার উজ্জ্বলতা, সাউন্ড, ছবির মোড ইত্যাদি)।
৬. কন্ট্রোলিং:
- রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার: টিভির রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে চ্যানেল পরিবর্তন, ভলিউম বাড়ানো/কমানো, এবং অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করুন।
- ভয়েস কন্ট্রোল: যদি টিভি ভয়েস কন্ট্রোল সমর্থন করে, তাহলে ভয়েস কমান্ড ব্যবহার করতে পারেন।
৭. ফিচার এক্সপ্লোর করা:
- স্ট্রিমিং সেবা: স্ট্রিমিং সেবা চালু করুন এবং আপনার প্রিয় কনটেন্ট দেখতে শুরু করুন।
- ফাইল শেয়ারিং: আপনার ফোন বা কম্পিউটার থেকে টিভিতে মিডিয়া শেয়ার করুন।
স্মার্ট টিভির বৈশিষ্ট
স্মার্ট টিভি কেনার আগে কি কি করণীয়? সে সম্পর্কে আমরা জেনেছি। কিন্তু আপনি কি স্মার্ট টিভির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানেন। যদি আপনি স্মার্ট টিভি কিনতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিতে হবে। স্মার্ট টিভির বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণভাবে নিম্নরূপ:
১. ইন্টারনেট সংযোগ:
- ওয়াই-ফাই বা ইথারনেট: ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্ট্রিমিং সার্ভিস, অ্যাপস এবং ব্রাউজিং করার সুবিধা।
২. স্ট্রিমিং সার্ভিস:
- অ্যাপস: Netflix, Amazon Prime, Disney+, YouTube ইত্যাদি অ্যাপস ইনস্টল করা এবং ব্যবহার করার সুবিধা।
৩. অপারেটিং সিস্টেম:
- ব্র্যান্ড নির্ভর: Android TV, WebOS, Tizen ইত্যাদি অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপ এবং ফিচার সরবরাহ করা।
৪. অ্যাপস এবং গেমস:
- ডাউনলোড এবং ইনস্টল: Google Play Store বা অন্যান্য স্টোর থেকে অ্যাপস এবং গেমস ডাউনলোড করা যায়।
৫. ভয়েস কন্ট্রোল:
- ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট: Google Assistant, Alexa ইত্যাদি ব্যবহার করে ভয়েস কমান্ড দিয়ে টিভি পরিচালনা করা।
৬. ফাইল শেয়ারিং এবং কাস্টিং:
- Google Cast / Chromecast: স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট থেকে টিভিতে কনটেন্ট কাস্ট করা।
৭. রেজোলিউশন এবং প্যানেল টাইপ:
- উচ্চ রেজোলিউশন: 4K, 8K, Full HD রেজোলিউশন সহ বিভিন্ন প্যানেল টাইপ (LED, OLED, QLED) প্রদান করা।
৮. সাউন্ড কোয়ালিটি:
- বিল্ট-ইন সাউন্ড: উন্নত সাউন্ড সিস্টেম, Dolby Atmos বা DTS সাপোর্ট থাকতে পারে।
৯. ব্রাউজিং এবং মিডিয়া প্লেব্যাক:
- ওয়েব ব্রাউজার: ইন্টারনেট সার্ফিং এবং মিডিয়া প্লেব্যাক করার সুবিধা।
১০. স্মার্ট হোম ইন্টিগ্রেশন:
- স্মার্ট হোম ডিভাইস: স্মার্ট হোম ডিভাইস (যেমন লাইট, থার্মোস্ট্যাট) নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা।
১১. মিররিং এবং স্ক্রীন শেয়ারিং:
- মিররিং: ফোন বা কম্পিউটারের স্ক্রীন টিভিতে শেয়ার করা।
১২. আপডেটস এবং ম্যানেজমেন্ট:
- স্বয়ংক্রিয় আপডেটস: সফটওয়্যার আপডেটস এবং সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট সহজ।
১৩. মাল্টিমিডিয়া প্লেব্যাক:
- USB এবং HDMI পোর্ট: বিভিন্ন মিডিয়া ফাইল প্লেব্যাক করার জন্য USB এবং HDMI পোর্ট।
স্মার্ট টিভির সুবিধা -অসুবিধা
স্মার্ট টিভির সুবিধা -অসুবিধা সম্পর্কে জানব। যেহেতু আপনি স্মার্ট টিভি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেহেতু অবশ্যই আপনাকে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত।
স্মার্ট টিভির সুবিধা:
- স্ট্রিমিং সুবিধা:
- অ্যাপস: Netflix, Amazon Prime, Disney+, YouTube ইত্যাদি স্ট্রিমিং সার্ভিসের অ্যাক্সেস।
- লাইভ টিভি: কিছু টিভিতে লাইভ টিভি চ্যানেল স্ট্রিমিং করা যায়।
- ইন্টারনেট ব্রাউজিং:
- ওয়েব ব্রাউজার: টিভির মাধ্যমে ইন্টারনেট সার্ফিং এবং তথ্য অনুসন্ধান করা সম্ভব।
- অ্যাপস এবং গেমস:
- বিভিন্ন অ্যাপস: বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস ডাউনলোড এবং ইনস্টল করা যায়।
- গেমিং: কিছু টিভিতে গেমস খেলার সুবিধা।
- ভয়েস কন্ট্রোল:
- ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট: Google Assistant, Alexa ইত্যাদি ব্যবহার করে টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- ফাইল শেয়ারিং এবং কাস্টিং:
- কাস্টিং: স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট থেকে টিভিতে কনটেন্ট কাস্ট করা।
- ফাইল শেয়ারিং: মিডিয়া ফাইল সরাসরি টিভিতে প্লেব্যাক করা।
- স্মার্ট হোম ইন্টিগ্রেশন:
- স্মার্ট ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ: স্মার্ট হোম ডিভাইস (যেমন লাইট, থার্মোস্ট্যাট) নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- আপডেটস:
- স্বয়ংক্রিয় আপডেটস: সফটওয়্যার আপডেটস সহজে ইনস্টল করা যায়।
স্মার্ট টিভির অসুবিধা:
- দাম:
- উচ্চমূল্য: স্মার্ট টিভির দাম সাধারণত বেশি হতে পারে।
- গোপনীয়তা সমস্যা:
- ডেটা সংগ্রহ: স্মার্ট টিভি কিছু সময়ে ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, যা গোপনীয়তা সংক্রান্ত উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।
- ইন্টারনেট নির্ভরতা:
- নেটওয়ার্ক সমস্যা: ইন্টারনেট কানেকশন না থাকলে অনেক ফিচার কার্যকর হবে না।
- কনফিগারেশন সমস্যা:
- জটিল সেটআপ: কিছু স্মার্ট টিভির সেটআপ এবং কনফিগারেশন জটিল হতে পারে।
- আবহাওয়া এবং স্বাস্থ্যের প্রভাব:
- স্ক্রীনের প্রভাব: দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রীন দেখলে চোখের সমস্যা হতে পারে।
- সোর্স এবং ইনস্টলেশনের সমস্যা:
- অ্যাপস আপডেট: কিছু অ্যাপস নিয়মিত আপডেট পাওয়া নাও যেতে পারে।
- ওয়ারেন্টি ও সেবা: সার্ভিস সেন্টারের প্রাপ্যতা এবং ওয়ারেন্টি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে
ভালো ব্রান্ডের স্মার্ট টিভি
স্মার্ট টিভি কেনার আগে কি কি করণীয় আছে এই করণীয় গুলো জেনে আমাদের অবশ্যই টিভি কেনা উচিত। স্মার্ট টিভির বাজারে বেশ কিছু নামী ব্র্যান্ড রয়েছে যারা উচ্চমানের পণ্য সরবরাহ করে। নিচে কিছু জনপ্রিয় এবং ভালো ব্র্যান্ডের স্মার্ট টিভির তালিকা দেওয়া হলো:
১. Samsung:
- প্যানেল টেকনোলজি: QLED, OLED, এবং Crystal UHD।
- অপারেটিং সিস্টেম: Tizen OS।
- ফিচারস: উন্নত রেজোলিউশন, অসাধারণ কালার এবং কন্ট্রাস্ট, ভালো সাউন্ড কোয়ালিটি।
- বিশেষত্ব: QLED টিভির জন্য বিখ্যাত, এবং ব্র্যান্ড হিসেবে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।
২. LG:
- প্যানেল টেকনোলজি: OLED, NanoCell।
- অপারেটিং সিস্টেম: WebOS।
- ফিচারস: উন্নত কালার কন্ট্রোল, দ্রুত রেসপন্স টাইম, দুর্দান্ত ভিউইং এঙ্গেল।
- বিশেষত্ব: OLED টিভির জন্য খ্যাত, বিশেষ করে কালার এবং কনট্রাস্টের জন্য জনপ্রিয়।
৩. Sony:
- প্যানেল টেকনোলজি: OLED, LED।
- অপারেটিং সিস্টেম: Android TV।
- ফিচারস: ট্রিলুমিনাস ডিসপ্লে, X-Reality Pro, HDR সাপোর্ট, ভালো সাউন্ড সিস্টেম।
- বিশেষত্ব: চমৎকার ছবির মান এবং সাউন্ড কোয়ালিটির জন্য পরিচিত।
৪. Xiaomi (Mi TV):
- প্যানেল টেকনোলজি: LED।
- অপারেটিং সিস্টেম: Android TV (PatchWall UI)।
- ফিচারস: অ্যাফোর্ডেবল প্রাইস, Google Assistant, Chromecast সাপোর্ট।
- বিশেষত্ব: কম দামে ভালো মানের স্মার্ট টিভির জন্য পরিচিত।
৫. TCL:
- প্যানেল টেকনোলজি: QLED, LED।
- অপারেটিং সিস্টেম: Android TV, Roku TV (আঞ্চলিক নির্ভর)।
- ফিচারস: অ্যাফোর্ডেবল, Dolby Vision, HDR10+ সাপোর্ট।
- বিশেষত্ব: বাজেট ফ্রেন্ডলি টিভি হলেও, ছবির মান ভালো।
৬. Panasonic:
- প্যানেল টেকনোলজি: OLED, LED।
- অপারেটিং সিস্টেম: My Home Screen (Firefox OS ভিত্তিক)।
- ফিচারস: ভালো কালার রিপ্রোডাকশন, HDR সাপোর্ট।
- বিশেষত্ব: পিকচার কোয়ালিটির জন্য সুপরিচিত।
৭. Philips:
- প্যানেল টেকনোলজি: OLED, LED।
- অপারেটিং সিস্টেম: Android TV।
- ফিচারস: Ambilight টেকনোলজি, HDR সাপোর্ট।
- বিশেষত্ব: Ambilight এর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত, যা আরও উন্নত ভিউইং অভিজ্ঞতা দেয়।
৮. Hisense:
- প্যানেল টেকনোলজি: ULED, LED।
- অপারেটিং সিস্টেম: Android TV, Roku TV।
- ফিচারস: 4K রেজোলিউশন, Dolby Vision, HDR10+।
- বিশেষত্ব: কম বাজেটে ভালো মানের টিভির জন্য জনপ্রিয়।
৯. Vizio:
- প্যানেল টেকনোলজি: OLED, LED।
- অপারেটিং সিস্টেম: SmartCast।
- ফিচারস: অ্যাপল AirPlay এবং Google Cast সাপোর্ট।
- বিশেষত্ব: ভালো মানের টিভি, সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়।
১০. OnePlus:
- প্যানেল টেকনোলজি: QLED, LED।
- অপারেটিং সিস্টেম: Android TV।
- ফিচারস: Dolby Atmos সাপোর্ট, HDR10+, Google Assistant।
- বিশেষত্ব: নতুন হলেও দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
আমাদের শেষ কথা
স্মার্ট টিভি কেনার ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু একবার কিনে দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে চান, তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এবং সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। স্মার্ট টিভি একটি বড় বিনিয়োগ, তাই সেটি কেনার আগে সঠিক তথ্য জেনে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এই আর্টিকেলে স্মার্ট টিভি কেনার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনা করা উচিত তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে, যেমন টিভির সাইজ, বাজেট, রেজুলুশন, ডিসপ্লে প্রযুক্তি, অডিও কোয়ালিটি, এবং কানেক্টিভিটি।
আমাদের দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করে আপনি সহজেই একটি ভালো মানের স্মার্ট টিভি নির্বাচন করতে পারবেন, যা দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর থাকবে। আমাদের আর্টিকেলের সাথে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আরও এমন দরকারী তথ্য পেতে নিয়মিতভাবে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে ভুলবেন না।
Comments
Post a Comment