প্রতিদিনের আঁশ গ্রহণের পরিমাণ ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ এবং শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। তবে সাধারণভাবে:
পুরুষদের জন্য ৩০-৩৮ গ্রাম আঁশ প্রয়োজন।
মহিলাদের জন্য ২১-২৫ গ্রাম আঁশ প্রয়োজন।
এটি স্বাস্থ্যকর পাচন প্রক্রিয়া বজায় রাখা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে সহায়ক। আঁশের প্রধান উৎস হলো শাকসবজি, ফল, বাদাম, শস্য এবং ডাল।
আঁশ সমৃদ্ধ কিছু খাবার:
ওটস, ব্রাউন রাইস, এবং গোটা শস্য
আপেল, নাশপাতি, এবং বেরিজাতীয় ফল
মটরশুটি, ছোলা, মসুর ডাল
ব্রকলি, গাজর, শাক
আঁশযুক্ত খাবার কাকে বলে ?
আঁশযুক্ত খাবার বলতে সেই খাবারগুলোকে বোঝানো হয়, যেগুলোতে উচ্চমাত্রার ডায়েটারি ফাইবার বা খাদ্য আঁশ থাকে। খাদ্য আঁশ হলো উদ্ভিদজাত খাবারের এক ধরনের অংশ, যা আমাদের হজমশক্তি দ্বারা সম্পূর্ণরূপে ভাঙানো যায় না। এটি মূলত দুই ধরনের:
দ্রবণীয় আঁশ (Soluble Fiber): যা পানি শোষণ করে এবং হজমে সহায়ক জেল জাতীয় পদার্থে পরিণত হয়। এটি রক্তে কোলেস্টেরল এবং সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
উদাহরণ: ওটস, আপেল, কমলা, মটরশুঁটি।
অদ্রবণীয় আঁশ (Insoluble Fiber): যা হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্ষত থেকে যায় এবং অন্ত্রের গতিশীলতা উন্নত করতে সহায়ক। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
উদাহরণ: গমের চাল, বাদাম, গাজর, ফুলকপি।
আঁশযুক্ত খাবারের প্রধান উৎস:
শস্যদানা: ওটস, ব্রাউন রাইস, গোটা গমের রুটি
শাকসবজি: ব্রকলি, গাজর, পালং শাক
ফলমূল: আপেল, নাশপাতি, বেরিজাতীয় ফল
ডাল এবং মটরশুঁটি: ছোলা, লাল মসুর, মটর
বাদাম ও বীজ: আখরোট, সূর্যমুখী বীজ
আঁশযুক্ত খাবার গুরুত্বপূর্ণ কেন ?
আঁশযুক্ত খাবার স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর বেশ কয়েকটি উপকারিতা রয়েছে:
হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে: আঁশ অন্ত্রের গতিশীলতা বৃদ্ধি করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সহায়ক।
রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: দ্রবণীয় আঁশ কোলেস্টেরল স্তর কমাতে সহায়ক, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: আঁশ সুগারের শোষণ ধীর করে দেয়, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: আঁশ যুক্ত খাবার দীর্ঘ সময় ধরে পেট পূর্ণ রাখতে সাহায্য করে, যা অতিরিক্ত খাওয়া কমাতে সাহায্য করে।
প্রি-বায়োটিকস: আঁশ কিছু প্রকার উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ: নিয়মিত আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া কিছু ধরনের ক্যান্সার, যেমন কলোরেক্টাল ক্যান্সার, এর ঝুঁকি কমাতে পারে।
আঁশযুক্ত সবজি কি কি ?
আঁশযুক্ত সবজি হলো এমন সবজি যা উচ্চমাত্রার খাদ্য আঁশ ধারণ করে। এসব সবজি পাচনতন্ত্র সুস্থ রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। এখানে কিছু জনপ্রিয় আঁশযুক্ত সবজির তালিকা:
ব্রকলি: ভিটামিন, মিনারেল এবং আঁশের ভালো উৎস।
গাজর: প্রচুর আঁশ এবং বিটা-ক্যারোটিন ধারণ করে।
ফুলকপি: উচ্চ আঁশের সাথে সাথে ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়ামও সরবরাহ করে।
শাক: পালং শাক, মিষ্টি শাক, রেড শাক ইত্যাদি উচ্চমাত্রার আঁশের উৎস।
বেগুন: আঁশ, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ।
শিম: উচ্চ আঁশের সাথে সাথে প্রোটিনও প্রদান করে।
সালাদ শাক: রেড লেটুস, রোমেন লেটুস ইত্যাদি।
মিষ্টি আলু: আঁশ, ভিটামিন এ এবং পটাশিয়ামের ভালো উৎস।
আঁশযুক্ত খাবার তালিকা
আঁশযুক্ত খাবার বিভিন্ন প্রকারের খাদ্যপদার্থে পাওয়া যায়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আঁশযুক্ত খাবারের তালিকা দেওয়া হলো:
ফলমূল:
আপেল: চামড়াসহ খেলে বেশি আঁশ পাওয়া যায়।
নাশপাতি: চামড়া সহ খাওয়া উত্তম।
কমলা: ভিটামিন সি ও আঁশের ভালো উৎস।
বেরি: স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাস্পবেরি।
শস্যদানা ও শস্যজাতীয় খাবার:
ওটস: উচ্চ আঁশযুক্ত, বিশেষ করে দ্রবণীয় আঁশ।
ব্রাউন রাইস: উচ্চ আঁশযুক্ত এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
গোটা গম: গোটা গমের রুটি বা পাস্তা।
কুইনোয়া: প্রোটিনের পাশাপাশি আঁশেরও ভালো উৎস।
ডাল ও মটরশুঁটি:
ছোলা: প্রচুর আঁশ ও প্রোটিন ধারণ করে।
মসুর ডাল: উচ্চ আঁশের সাথে পুষ্টি সমৃদ্ধ।
মটর: ভিটামিন এবং আঁশে সমৃদ্ধ।
বাদাম ও বীজ:
বাদাম: আখরোট, আমন্ড।
সেউরমুখী বীজ: উচ্চ আঁশ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।
সবজি:
ব্রকলি: উচ্চ আঁশ ও ভিটামিন সি।
গাজর: ভিটামিন এ এবং আঁশের ভালো উৎস।
ফুলকপি: ভিটামিন ক এবং আঁশযুক্ত।
শিম: আঁশ ও প্রোটিনের ভালো উৎস।
ফলমূল:
অ্যাভোকাডো: পুষ্টি ও আঁশে সমৃদ্ধ।
আঁশযুক্ত মাছ কি কি
সালমন: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও প্রোটিনের ভালো উৎস।
টুনা: প্রোটিন ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ।
ম্যাকেরেল: উচ্চ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিন।
হেরিং: উচ্চ ফ্যাটি অ্যাসিড ও পুষ্টি।
সবচেয়ে বেশি আঁশযুক্ত সবজি
ব্রকলি: প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২.৬ গ্রাম আঁশ।
বেগুন: প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৩ গ্রাম আঁশ।
শিম: প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৬.৬ গ্রাম আঁশ।
ফুলকপি: প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২.৫ গ্রাম আঁশ।
গাজর: প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২.৮ গ্রাম আঁশ।
পালং শাক: প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২.২ গ্রাম আঁশ।
সবুজ মটর: প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২.৫ গ্রাম আঁশ।
আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার উপকারিতা
আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এখানে কিছু প্রধান উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
হজমের উন্নতি: আঁশ অন্ত্রের গতিশীলতা বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক। এটি পেট পরিষ্কার রাখতে এবং সুস্থ পাচনতন্ত্র বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: আঁশযুক্ত খাবার দীর্ঘ সময় ধরে পেট পূর্ণ রাখে, যা অতিরিক্ত খাওয়া কমাতে সাহায্য করে। এটি ওজন কমানোর জন্য সহায়ক হতে পারে।
রক্তে কোলেস্টেরল কমানো: দ্রবণীয় আঁশ কোলেস্টেরল শোষণ করে এবং রক্তের কোলেস্টেরল স্তর কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: আঁশ খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কমিয়ে দেয়, যা রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা: আঁশ অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়ক, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা: নিয়মিত আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ কিছু ধরনের ক্যান্সার, বিশেষ করে কলোরেক্টাল ক্যান্সার, এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
কিডনি এবং হার্টের স্বাস্থ্য: আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া কিডনি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
দিনে কত গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার খেতে হয়
প্রতিদিনের আঁশ গ্রহণের পরিমাণ ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ, এবং শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে, তবে সাধারণভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়:
পুরুষদের জন্য: ৩০-৩৮ গ্রাম আঁশ
মহিলাদের জন্য: ২১-২৫ গ্রাম আঁশ
বিভিন্ন বয়সের জন্য পরামর্শ:
বাচ্চাদের (১-৩ বছর): প্রায় ১৯ গ্রাম
বাচ্চাদের (৪-৮ বছর): প্রায় ২৫ গ্রাম
যুবকদের (৯-১৩ বছর): মেয়েদের জন্য ২৬ গ্রাম, ছেলেদের জন্য ৩১ গ্রাম
কিশোর-কিশোরীদের (১৪-১৮ বছর): মেয়েদের জন্য ২৮ গ্রাম, ছেলেদের জন্য ৩৮ গ্রাম
শেষ কথা
আঁশযুক্ত খাবার সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মূল উপকারিতা হলো:
হজম স্বাস্থ্য: কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক এবং অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: দীর্ঘ সময় পেট পূর্ণ রাখে, অতিরিক্ত খাওয়া কমায়।
রক্তে কোলেস্টেরল ও সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: হৃদরোগ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
স্বাস্থ্যকর অন্ত্রের পরিবেশ: উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়।
রোগ প্রতিরোধ: কিছু ধরনের ক্যান্সার ও অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ করতে সহায়ক।
Comments
Post a Comment